Image description

শত শত বিঘা জমি দখলের অভিযোগ আগে থেকেই। অতঃপর পুকুর খননের মধ্য দিয়ে দখল। নির্জন বিলে করেছেন প্রমোদ আয়োজনে থিতু হতে তিন তলা বাড়ি । 'জলসা ঘর' নামে খ্যাত হওয়া এই স্থাপনায় কী চলে, তা নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দীনের কথাই বলা হচ্ছে। 

আয়েন উদ্দীন; রাজশাহীর পবা ও মোহনপুরের বহুল বিতর্কিত রাজনীতিক, যার বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। প্রয়াত জ্যেষ্ঠ নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত নয়, রাজশাহীর শ্রমিক লীগ নেতা সুরঞ্জিত সরকার একবার বলেছিলেন,  ‘একজন রাজাকারের ছেলে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হয়েছেন—এটা পবা মোহনপুরের নয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কলঙ্ক।’ 

অনুসন্ধান করে জানা গেছে, মোহনপুরের আত্রাই অগ্রণী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মো. বাবলুর রহমানের লেখা ‘একাত্তরে মোহনপুর’ শীর্ষক পুস্তকটির  একটি পাতায় মোহনপুরের মহিষকুণ্ডি গ্রামের শান্তি কমিটির সদস্যদের তালিকা রয়েছে। ওই তালিকার তিন নম্বরে হবির মণ্ডলের নাম লেখা আছে। এই হবির মণ্ডল রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের বাবা। যিনি রাজাকার ছিলেন বলেই এলাকার জ্যেষ্ঠ মানুষগুলো উল্লেখ করছেন। 

এদিকে সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের বিরুদ্ধে জামায়াতপ্রীতি ও নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। তেমন ধারাবাহিকতায় এই বছরের শুরুতে উপজেলা কৃষক লীগের মহিলা সম্পাদক শেখ হাবিবা বলেন, ‘সংসদ সদস্যের কুকর্ম ফাঁস করে দেওয়ায় গত ২৩ নভেম্বর মোহনপুর উপজেলা চত্বরে প্রকাশ্যে আমার ওপর হামলা চালিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। সেই ঘটনার সিসিটিভির ফুটেজ আছে। ওই ফুটেজ দেখলে যে কেউ শিউরে উঠবেন।" 

একসময় রাজনৈতিক সুবিধা পেতে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমেই সাংসদ আয়েন উদ্দীনের পথচলা শুরু হয়। পেছনে আর তাকাতে হয়নি। ২০১৪ সালে আকস্মিকভাবে তিনি সংসদ সদস্য হয়ে যান। এর পর পরই তিনি মোহনপুরের তুলসীক্ষেত্রে সাধারণ কৃষকদের ৩০০ বিঘা জায়গা নিজের করে নিতে দখল করেন। 

সূত্র দাবি করছে, আয়েন উদ্দীন চককৃষ্ণপুরের বৃদ্ধ আহমদ আলীকে ১০ হাজার টাকা শতক দাম দিয়ে ৮৬ শতক ধানি জমি নিজের আয়ত্বে নেন জোর করে। মহিশকুন্ডির অখিল চন্দ্র দাসের ৪৮ শতাংশ জায়গা কোন অর্থ না দিয়েই দখল করে নেন। 

অন্যদিকে আয়েন উদ্দীনের বহুল আলোচিত জলসা ঘর নির্জন বিলের প্রান্ত ঘেষে তিন তলার একটা স্থাপনা।

সূত্র বলছে, গোপনে ও অন্ধকারে তিনি এখানে আমোদ-ফুর্তি করেন। রাজশাহীর প্রভাবশালী কয়েকজন যুবলীগ নেতা, ঠিকাদার ও রাজধানী ঢাকা থেকে ফিল্মী পাড়ার সি গ্রেডের নায়িকাদের নিয়ে রাতভর যৌনতা ও মদের আসর চলে। 

অপরদিকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এবার আয়েন উদ্দীন দলীয় মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন, তেমন বাস্তবতা নেই। এলাকায় দখলবাজি করা, স্বাধীনতা বিরুদ্ধশক্তির সাথে অতি সখ্যতা এবং নিজ এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে দূরত্ব----তাঁকে রেড সিগন্যালের দিকে নিয়ে গেছে। দলের হাই কমান্ড থেকে আর সবুজ সিগন্যাল পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই গুঞ্জন আছে। 

ভয়ঙ্কর মূর্তি ধারণ করে সন্ত্রাসের ধারক হিসাবে তাঁকে নিজ এলাকায় দেখা হয়। অপেক্ষাকৃত অনুজ্জ্বল এই নেতার ভবিষ্যৎ সুখের নয় বলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করেন।

মানবকণ্ঠ/এসআরএস