Image description

ঝিমিয়ে পড়া সৈয়দপুরের ফুটবল যেন নতুন করে প্রাণ খুঁজে পেয়েছে। নব্বই দশকের সেই মাঠভর্তি দর্শকের উন্মাদনা আবারও ফিরে এসেছে সৈয়দপুর প্রিমিয়ার লীগ (এসপিএল) ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২৫-এর হাত ধরে। স্থানীয় ২৫২ জন খেলোয়াড়ের অংশগ্রহণে ১২টি দলের এই ফুটবল লড়াই দেখতে প্রতিদিন সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেডিয়ামে ভিড় করছে ক্রীড়ামোদি দর্শক। শুধু সৈয়দপুর নয়, দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষ ছুটে আসছেন এই জমজমাট খেলা উপভোগ করতে।

সৈয়দপুরের তরুণ ফুটবলারদের সংগঠন প্লেয়ার্স এসোসিয়েশন অব সৈয়দপুর আয়োজিত এই দর্শকপ্রিয় টুর্নামেন্টের উদ্বোধন হয় গত ১০ মে এবং চলবে মাসব্যাপী ।

সৈয়দপুর রেলওয়ে মাঠের পাশে দলবেঁধে খেলা দেখা ষাটোর্ধ্ব রিয়াজ উদ্দিন স্মৃতিচারণ করে বলেন, "নব্বই দশকে এমন জমকালো আয়োজন হতো। রেলওয়ের আন্তঃবিভাগীয় খেলায় পাকশি, রাজশাহী, শান্তাহার, খুলনাসহ বিভিন্ন দল আসত খেলতে। তখন মোবাইলের তেমন প্রচলন না থাকায় মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ থাকত। সেই চিত্র হারিয়ে গিয়েছিল। তবে আজ সেই দিনগুলোর পর আবারও মাঠে এত দর্শক দেখে খুব ভালো লাগছে। প্রতিদিন খেলা দেখতে আসছি।"

ফুটবলের এই জমজমাট আসরের মূল উদ্যোক্তা সৈয়দপুরের একঝাঁক তরুণ ও যুবক নিয়ে গঠিত প্লেয়ার্স এসোসিয়েশন অব সৈয়দপুর। এসোসিয়েশনের শেখ কুতুব উদ্দিন ও মনোয়ার মনু জানান, "ফুটবলকে মাঠে ফেরানোই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। ২৫২ জন ফুটবলারকে ১২টি দলে ভাগ করে এই এসপিএলের আয়োজন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ঢাকা লীগসহ বিভিন্ন বড় টুর্নামেন্টে খেলা অনেক খেলোয়াড়ও রয়েছে। আমরা আশা করছি এই আয়োজন থেকে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় উঠে আসবে, যারা দেশের ফুটবলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। মাঠভর্তি দর্শক আমাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।"

প্লেয়ার্স এসোসিয়েশন অব সৈয়দপুরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দর্শকদের এই বিপুল চাহিদার কথা মাথায় রেখে প্রতি বছর আরও বড় পরিসরে ফুটবল লীগ আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী দলগুলো হলো সৈয়দপুর ফুটবল এলিভেন, ডাইনামিক সৈয়দপুর, সৈয়দপুর চ্যালেঞ্জার্স, সৈয়দপুর ফুটবল স্টার, সৈয়দপুর ফুটবল কিংস, সৈয়দপুর ফুটবল জায়ান্টস, সৈয়দপুর বেঙ্গল, সৈয়দপুর বয়েজ, সৈয়দপুর ইয়াং স্টার, সৈয়দপুর ব্লাস্টার, সৈয়দপুর ব্লাক হিরোস ও দুরন্ত সৈয়দপুর।

প্রতিদিন সৈয়দপুর রেলওয়ে মাঠে দুটি করে খেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং এই খেলা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন ফুটবলপ্রেমীরা। আয়োজক কমিটি দর্শকদের জন্য বিনামূল্যে খেলা দেখার সুযোগ রেখেছে, যার ফলে প্রতিদিন মাঠে উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। প্রতিটি ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়কে পুরস্কৃতও করা হচ্ছে।

নীলফামারীর টেক্সটাইল এলাকা থেকে বন্ধুদের সাথে খেলা দেখতে আসা সহিদুল বলেন, "যেখানেই ফুটবল খেলা হয়, আমরা ছুটে যাই দেখতে। সৈয়দপুর শহরে ফুটবলের এত দর্শক দেখে আমি সত্যিই অবাক হয়েছি। কারণ আমি জানতাম এখানে বেশিরভাগ মানুষ ক্রিকেট পছন্দ করে। তবে আয়োজকরা যেভাবে আয়োজন করেছেন, তাতে মনে হচ্ছে ফুটবল সত্যিই প্রাণ ফিরে পেয়েছে।"

প্লেয়ার্স এসোসিয়েশন অব সৈয়দপুরের আহ্বায়ক এরশাদ হোসেন পাপ্পু জানান, "আমরা শহরবাসী, বিশেষ করে তরুণ সমাজকে মাদক ও জুয়া থেকে দূরে রাখতে এই খেলার আয়োজন করছি। এর আগে আমাদের এসোসিয়েশন বড় পরিসরে ক্রিকেট লীগের আয়োজন করেছিল, যেখানে ঢাকা লীগসহ জাতীয় দলের খেলোয়াড়রাও অংশ নিয়েছিলেন। সেই সাফল্যের অনুপ্রেরণায় ঝিমিয়ে পড়া ফুটবলকে চাঙ্গা করতেই এই সৈয়দপুর প্রিমিয়ার লীগের আয়োজন। এত সাড়া পাব ভাবিনি। মাঠভর্তি দর্শকদের ভালোবাসাই আমাদের প্রতি বছর এমন আয়োজনের প্রেরণা।"

উল্লেখ্য, সৈয়দপুরের ২৫২ জন ফুটবলারকে নিয়ে ১২টি দল এই টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে। টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান এবং অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক শাহ সুফী নুর মোহাম্মদসহ অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক নুর-ই- আলম সিদ্দিকী বলেন, "স্থানীয় খেলায় এত দর্শক সচরাচর দেখা যায় না। কিন্তু এখানে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে দর্শকরা আসছেন। মাঠ ভর্তি দর্শক। অবশ্যই এমন আয়োজনকে আমরা সাধুবাদ জানাই এবং ভবিষ্যতেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।"