Image description

মৌলভীবাজারে গত ২০ আগস্ট ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা দেখা দিয়েছিল। বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল জেলার ছোট-বড় প্রায় সবকটি সড়ক। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এসব সড়ক থেকে পানি নেমে গেলেও ভাঙন ও খানাখন্দে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত প্রায় তিন মাসেও সংস্কার হয়নি ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো। ফলে প্রতিদিন ভাঙা সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আগস্ট মাসে মৌলভীবাজার জেলায় কয়েক দফা বন্যার সৃষ্টি হয়। বন্যার পানিতে সড়কগুলো তলিয়ে গিয়ে যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়েছে। অনেক সেতু-কালভার্ট ধসে পড়েছে। অনেক স্থানে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রত্যন্ত এলাকায় যেতে দুর্ভোগের শিকার হয় স্থানীয়রা।

কমলগঞ্জ উপজেলার কমলগঞ্জ-আদমপুর সড়ক ঘুরে দেখা যায়, সড়কটির বিভিন্ন স্থানজুড়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। সড়কের আদমপুর ইউনিয়নের ঘোড়ামারা এলাকার প্রায় আধা কিলোমিটার ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আছে। যানবাহন চালানোর কোনও সুযোগ নেই। এক গর্ত এড়িয়ে চলতে গেলে অন্য গর্তে গাড়ির চাকা পড়ে যায়। কোথাও সড়কের পাশ ও ঢাল ধসে পড়েছে। একই অবস্থা আদমপুর বাজারের দক্ষিণ পাশের সড়কের। 

এ ছাড়া শ্রীমঙ্গল-ফুলবাড়ী-রুপসপুর এলাকায় গ্রামীণ সড়কগুলো ভেঙে গেছে। বড় বড় গর্তে পড়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। রুপসপুর এলাকার বাসিন্দা মাদ্রাসা শিক্ষক ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কে বড় বড় গর্ত হয়ে গেছে। আবার অনেক জায়গায় পিচ উঠে বেহাল অবস্থা দেখা দিয়েছে। এসব সড়ক দিয়ে চলাচলে খুবই কষ্ট হয় আমাদের।’ একই কথা জানালেন ফুলবাড়ীর বাসিন্দা সুমী বেগম ও মাসুক মিয়া। 

সওজের মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার মধ্যে বন্যায় সওজের ১৫টি সড়কের ৭৫ কিলোমিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে আছে রাজনগর-কুলাউড়া-জুড়ী-বড়লেখা-বিয়ানীবাজার-শ্যাওলা-চারখাই সড়ক, জুড়ী-লাঠিটিলা সড়ক, শাহবাজপুর-জলঢুপ সড়ক, বড়লেখা-শাহবাজপুর-লাতু সড়ক, জুড়ী-ফুলতলা-বটুলি সড়ক, মৌলভীবাজার-শমসেরনগর-চাতলা চেকপোস্ট সড়ক, কুলাউড়া-শমসেরনগর-শ্রীমঙ্গল সড়ক, হামরকোনা এন-২০৭ পুরাতন এলাইনমেন্ট সড়ক, জুড়ী (ক্লিবডন)-কুলাউড়া (গাজীপুর) সড়ক, কুলাউড়া-পৃথিমপাশা-হাজীপুর-শরিফপুর (লিংক টু রবিরবাজার-টিলাগাঁও) সড়ক, মৌলভীবাজার (রাজনগর)-সিলেট (বালাগঞ্জ) সড়ক, মিরপুর-শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার-শেরপুর সড়ক, মৌলভীবাজার-রাজনগর-ফেঞ্চুগঞ্জ-সিলেট সড়ক, কুলাউড়া (গাজীপুর)-জুড়ী (সাগরনাল) উপজেলার সংযোগ সড়কগুলো।

সওজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বন্যায় সওজের সড়কগুলোর যে ক্ষতি হয়েছে, তা সংস্কার ও নির্মাণে তিন স্তরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়মিত সংস্কারের জন্য চাহিদা দেওয়া হয়েছে ১৫ কোটি টাকার। মধ্যবর্তী সংস্কারের জন্য চাওয়া হয়েছে ১২০ কোটি টাকা এবং দীর্ঘমেয়াদি কাজের জন্য সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।

সওজের মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার হামিদ বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। এখনও অনুমোদন মেলেনি। নিয়মিত বিভাগীয়ভাবে রিপেয়ারিং কাজ হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার বা পুননির্মাণের জন্য এখনও বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।’

জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় জেলায় এলজিইডির ২২৩টি ছোট-বড় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সব রাস্তা পাকা। এসব সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশের পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ৪০৫ কিলোমিটার। এ ছাড়া বিভিন্ন সড়কের ৩৪টি সেতু-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো সংস্কার করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ৫৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এলজিইডির বেশিরভাগ সড়ক গ্রামীণ। গ্রামের সঙ্গে উপজেলা ও জেলা সদরের সংযোগ তৈরি করেছে এসব সড়ক। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কমলগঞ্জ-আদমপুর সড়ক ও আদমপুর-মাধবপুর-ভানুগাছ সড়ক। ধলাই নদের ভাঙনে এই দুটি সড়ক তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো সংস্কারের চেষ্টা চলছে।

এলজিইডির মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আবদুল্লাহ বলেন, ‌‘জেলার অনেকটি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে সড়কগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, সেগুলো ঠিক করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ছোট ছোট কিছু স্কিম নেওয়া হয়েছে। তবে এখনও কাজ শুরু হয়নি। টেন্ডার হবে, তারপর কাজ হবে। এ ছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কিছু স্থানের তথ্য চেয়েছে, তা পাঠানো হয়েছে।’