
দেশে ২০১৮ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন করা হলেও এতোদিনেও চ‚ড়ান্ত হয়নি ডোপ টেস্ট বিধিমালা। যদিও আইনের ২৪ (৪) ধারায় মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে ডোপ টেস্ট করার কথা বলা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় এবং বিআরটিএ থেকে গাড়ি চালকদের নতুন লাইসেন্স প্রদান ও লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, তারা ডোপ টেস্ট বিধিমালা প্রণয়নের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে একটি খসড়া পাঠিয়েছেন। সুরক্ষা বিভাগ সেটা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় থেকে সেই খসড়া বিধিমালাটি সংশোধনের জন্য ফেরত পাঠানো হয়।
২০২২ সালের ২১ ডিসেম্বর সংশোধিত বিধিমালাটি আবার সুরক্ষা সেবা বিভাগে পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগিরই সেটা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদক অণুবিভাগ) মো. সাইফুল ইসলাম।
সূত্র জানায়, মাদকাসক্ত ব্যক্তি শনাক্তে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে একটি প্রকল্প হাতে নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ‘আটটি বিভাগীয় শহরে এবং ১২টি জেলায় মাদকাসক্ত শনাক্তকরণ পরীক্ষা (ডোপ টেস্ট) প্রবর্তন’ নামের প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত সপ্তাহে বৈঠকে বসেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এ নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় দফায় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সভায় মাদকাসক্ত শনাক্তকরণ তথা ডোপ টেস্টের বিষয়ে একটি চ‚ড়ান্ত ও কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করতে বলা হয়। এছাড়া প্রণীত নীতিমালার ভিত্তিতে আলোচ্য প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত কার্যক্রমগুলো অর্থ বিভাগের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সুরক্ষা সেবা বিভাগের পরিচালন বাজেটের আওতায় পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেয়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চিকিৎসা ও পুনর্বাবসন শাখার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর ২৪ (৪) ধারায় মাদকাসক্ত ব্যক্তি শনাক্ত করার জন্য ডোপ টেস্ট করার কথা বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় এবং বিআরটিএ থেকে গাড়ি চালকদের নতুন লাইসেন্স প্রদান ও লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সময় ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে। তাই এ কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের উপ-সচিব মো. মশিউর রহমান বলেন, পিইসির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডোপ টেস্টের কার্যক্রম পরিচালন বাজেটের আওতায় পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। একই বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পি কে এম এনামুল করিম বলেন, রাজস্ব বাজেট থেকে ডোপ টেস্ট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্টের জন্য প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল জনবল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাংগঠনিক কাঠামোতে অন্তর্ভুক্তকরণের বিষয়ে প্রস্তাব পেলে সেটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়া হবে।
যে কারণে ডোপ টেস্ট প্রয়োজন: প্রায় প্রতিদিন দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। এর কারণ বের করতে গিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চালকের বেপরোয়া আচরণ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। সবক্ষেত্রেই সবার মধ্যেই একটা ধারণা হয়েছে চালকদের বেশিরভাগই মাদকাসক্ত থাকার কারণে বেসামাল হয়ে গাড়ি চালান। যে কারণে সরকারের পক্ষ থেকেও প্রথমে চালকদের লাইসেন্স দেয়ার আগে মাদকাসক্ত কি না সেটা পরীক্ষা করার জন্য বলা হয়। ড্রাগ স্টেস্ট বা ডোপ টেস্টের আওতায় নিয়ে আসা হলে তারা মাদক কম নেবেন। এতে সড়ক দুর্ঘটনাও কমে আসবে। সে ধারণা থেকেই ডোপ টেস্টের উদ্যোগ নেয়া হয়।
এছাড়া ২০২০ সালে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাড়িচালকদের জন্য মাদক পরীক্ষা (ডোপ টেস্ট) বাধ্যতামূলক করার নির্দেশনা দেন। বিষয়টি আরও গুরুত্ব দেয়ার জন্য সরকারি চাকরিজীবীদের বছরে একবার ডোপ টেস্ট করানোর সিদ্ধান্ত হয়। যাদের টেস্ট পজিটিভ বা মাদকাসক্ত বলে চিহ্নিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা বা আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদেরও ডোপটেস্টের আওতায় নিয়ে আসার প্রস্তাব দেয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেয়া হয়। যাতে শিক্ষার্থীরা মাদকাসক্ত হয়ে অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে। ২০১৮ সালে সরকারের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিসিএস ক্যাডার, নন-ক্যাডার, সরকারি যেকোনো চাকরিতে যোগদানের আগে অবশ্যই ডোপ টেস্ট করতে হবে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যাপ্ত ডোপ টেস্ট করার সক্ষমতা সব হাসপাতালেরও নেই।
মাত্র ছয় মাসে প্রায় ৫০ হাজার মাদক মামলা: দেশের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে উদ্ধার হওয়া মাদকদ্রব্য ও মামলা দায়েরের বিষয়টি একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। ওই প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারাদেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ৪৯ হাজার ৪৯১টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৬১ হাজার ৩৬৪ জনকে। এসব ঘটনায় উদ্ধার করা মাদকের মধ্যে রয়েছে অফিয়াম, হেরোইন, কোকেইন, ফেনসিডিল বা কোডিন, গাঁজা, ইনজেকটিং ড্রাগ বা অ্যাম্পুল, এটিএস বা ইয়াবা।
মানবকণ্ঠ/এআই
Comments