Image description

২০১৩ সালের ২ জুলাই হাসপাতালে ৮৪ দিন কোমায় থাকার পরে মৃত্যুবরণ করেন দিপ। এরপর থেকে ২ জুলাই কে ‘শহীদ আরিফ রায়হান দিপ দিবস’ হিসেবে পালন করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। মঙ্গলবার দুপুরে শহীদ আরিফ রায়হান দিপ স্মরণে বুয়েটের নজরুল ইসলাম হলে স্থাপিত দিপের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ।

এ সময় দিপের পিতা আজম আলী বলেন, বিচারিক আদালতে দিপের হত্যা মামলার যে রায় দেওয়া হয়েছে তাতে আমি মোটেও সন্তুষ্ট নই। কিন্তু বর্তমানে আমার এমন কোন ক্ষেত্র বা উপায় নেই যে আমি উচ্চ আদালতে যাব। উচ্চ আদালতে আপিল করার মত আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় বিচারিক আদালতের রায়ে আমি অসন্তুষ্ট হয়েও কিছু করতে পারছি না। তবে আমার প্রয়াত ছেলের বন্ধুরা এবং ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা মামলার বিষয়ে আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি আইনি সহযোগীতার বিষয়ে আমাকে আশ্বস্ত করেছে। এখন শেষ বয়সে এসে যদি আমার ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার দেখতে পারি তবে আমি মানসিক ভাবে সুস্থ জীবনে ফিরে যেতে পারব। 

এ সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দিপের বাবা বলেন, দিপের মৃত্যুর পর থেকে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর আমাদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে পরামর্শ এবং সহযোগিতা দিয়ে আমাদের আগলে রেখেছেন— তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিব আহমেদ মুরাদ বলেন, ১১ বছর আগে ২০১৩ সালের এই দিন কিছু ধর্মান্ধ মৌলবাদী জঙ্গী গোষ্ঠীর হামলায় নিহত হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহীদ আরিফ রায়হান দিপ। বুয়েটে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সক্রিয় থেকেছে, যার মধ্যে ছাত্রলীগ অন্যতম। আর দিপ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি হয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিনিধিত্ব করেছে, যার কারনে আমরা তাকে নিয়ে গর্ববোধ করি। বিচারিক আদালতের রায় নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট না থাকায় আমরা আপিল বিভাগে আবেদনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আশা করি খুব শিগগিরই উচ্চ আদালতে দিপ হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রাক্তন শিক্ষার্থী রনক আহসান বলেন, আবরার হত্যাকাণ্ডের বিচারের ক্ষেত্রে সামাজিক চাপের পাশাপাশি মামলার আইনি লড়াইয়ে বুয়েট কর্তৃপক্ষেরও সহযোগিতা ছিল। কিন্তু সাবেকুন নাহার ও আরিফ হত্যাকাণ্ডের আইনী লড়াইয়ে কর্তৃপক্ষের তেমন কোন ভূমিকা ছিল না। তবে বুয়েট কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি আবরারের পরিবারের মতো সনি ও দিপের পরিবারের পাশে এগিয়ে এসেছে। এই দুই পরিবারকে ৫০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক অনুদান দেয়া হয়েছে। সনি ও দিপ হত্যা মামলা পরিচালনায় বুয়েট কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করবে বলে ঘোষণা দেয়ায় তিনি বুয়েট প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

দিপ হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের মাধ্যমে সম্পন্ন করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এসময় মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়া এখন সময়ের দাবি।

আরিফ রায়হান দীপ বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন এবং বুয়েট ছাত্রলীগের তৎকালীন আহবায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ২০১৩ সালে শাহবাগ চত্ত্বরে অভূতপূর্ব আন্দোলন গড়ে তোলা গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন আরিফ রায়হান দিপ। মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের বিপক্ষে সোচ্চার হওয়ায় ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল বুয়েটের নজরুল ইসলাম হলে নিজ কক্ষে অবস্থানরত অবস্থায় আরিফ রায়হান দিপ’কে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে বুয়েটের আরেক ছাত্র ও হেফাজতে ইসলামের কর্মী মেজবাহ উদ্দিন। হাসপাতালে ৮৪ দিন কোমায় থাকার পর ২০১৩ সালের ২ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন দিপ। 

দিপ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হেফাজত কর্মী মেজবাহউদ্দীনকে গ্রেফতার করা হলেও আদালতে অপ্রকৃতস্থ হবার ভান করে জামিন নিয়ে সে পালিয়ে যায়। আদালতের খাতায় অপ্রকৃতস্থ ও পুলিশের খাতায় মেজবাহউদ্দীন পলাতক হলেও অনুসন্ধানে জানা গেছে যে সে বিয়ে করে পরিবারসহ দেশেই রয়েছে।