

সারাদেশে চলছে তাপপ্রবাহ। এবারের যে তাপপ্রবাহ তা গত ৫০ বছরেও দেখা দেয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপপ্রবাহ ভয়ংকর আকার নিয়েছে। একদিকে গ্রীষ্মকাল, চলছে তাপপ্রবাহ একই সঙ্গে দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ সংকট। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে সারা দেশে চলছে লোডশেডিং। তাপপ্রবাহের ভিতরে লোডশেডিংয়ে কারণে শিশুদের অসুখবিসুখ বেড়েছে। গরমে মশারি ছাড়া ঘুমানোর কারণে বাড়ছে ডেঙ্গুও। এই মহাসংকটের কারণে বিপাকে নগরবাসী। বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটরের ওপর ভরসা করছেন অনেকেই।
বর্তমানে মোট বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রায় ৩৩ শতাংশই গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেলের অভাবে ভুগছে। এসব কেন্দ্রের ৯ হাজার মেগাওয়াটের সক্ষমতা থেকে দিনে গড়ে উৎপাদিত হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট। এতে লোডশেডিং বাড়ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। গত দেড় দশকে দেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র ২৭টি থেকে বেড়ে ১৫৩টি হয়েছে।
বিচ্ছিন্ন চর, দুর্গম পাহাড়েও বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সরকার শতভাগ বিদ্যুতায়নের অর্জন উদ্যাপন করেছে। আর এখন শহর-গ্রাম সবখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে ভুগছে মানুষ। চাহিদার চেয়ে বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও জ্বালানি সংকটের কারণে তা কাজে লাগছে না। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের এমন সংকটের জন্য অব্যবস্থাপনা ও আমদানিনির্ভর পরিকল্পনাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। পিজিসিবির হিসাবে দেখা গেছে, দেশে মোট ১৫৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি বড় অংশ কারিগরি কারণে বন্ধ থাকে। ৩ জুন কারিগরি কারণে ৪৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ ছিল। একই দিন জ্বালানিস্বল্পতার কারণে সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহৃত হয়নি ৫৬টি কেন্দ্রের। এরপর ৪ জুন কারিগরি কারণে বন্ধ ছিল ৫০টি কেন্দ্র। আর জ্বালানি সমস্যায় ছিল ৫২টি কেন্দ্র।
বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও উৎপাদন করতে না পারায় এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বাড়ছে। ঘণ্টায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার লোডশেডিং দিতে হচ্ছে মধ্যরাতের পর। এতে ঢাকা শহরে তিন থেকে চার ঘণ্টা আর গ্রামে কোথাও কোথাও ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং করা হচ্ছে। দেশজুড়ে চলমান লোডশেডিং পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল জাতীয় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। তারা বলেছেন, বিদ্যুৎ খাতে সরকারের সফলতা ছিল। কিন্তু হঠাৎ পরিস্থিতি বদলে গেছে। লোডশেডিং যেভাবে বাড়ছে, তাতে জনরোষের সৃষ্টি হতে পারে। আগেভাগে কয়লা-গ্যাস আমদানি করলে এ অবস্থা হতো না।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এ সময় বলেছেন, আগামী ১৫-১৬ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। দেশের পাঁচটি কয়লাখনি থাকলেও মাত্র একটি থেকে উৎপাদন করা হচ্ছে। নিজস্ব কয়লায় বড়পুকুরিয়ায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো হয়। তাই বাকি চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র আমদানি করা কয়লার ওপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয়। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কম। তাই ফার্নেস তেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা এখন সাশ্রয়ী। কিন্তু বিল না পাওয়ায় ব্যাংকের দায় শোধ করা যাচ্ছে না এবং নতুন করে জ্বালানি তেল আমদানির ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না। দেশের এই সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি-এটা জনগণের জন্য মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা। এই পরিস্থিতি নিরসনে জরুরি ব্যবস্থা নিন।
মানবকণ্ঠ/এআই