প্রচার-প্রচারণা শেষ; সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত সবাই

নির্বাচন গাজীপুরে, রেশ বহুদূরে

তিন চতুর্থাংশ কেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ; বাড়তি সতর্কতা ইসির


  • অনলাইন ডেস্ক
  • ২৪ মে ২০২৩, ১৬:০৪

জাহাঙ্গীর কিরণ ও শামসুল হক ভূঁইয়া: টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রার্থীদের শহর চষে বেড়ানো, ভোটারদের কাছে গিয়ে প্রতিশ্রুতি আর পাশে থাকার আশ্বাস দেয়া এবং মিছিল-মাইকিংয়ের আওয়াজ বন্ধ হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচারের দাড়ি টানতে হলো অবশেষে। এবার শুধুই ভোটের অপেক্ষা। আগামীকাল ২৫ মে গাজীপুর সিটির এই নির্বাচনে ইভিএমে (ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোট দেবেন ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন ভোটার। এরইমধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (গাসিক) ভোটের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠানে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি কোনো ধরনের ছাড় দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার কিংবা কোনো কারণে ভোটের পরিবেশ বিঘিœত হলে সাথে সাথেই ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এদিকে গাজীপুর নগরীর ভোটকে ঘিরে অনেকে অনেক সমীকরণ মেলানোর চেষ্টা করছেন। রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, সমর্থক তো বটেই খোদ নির্বাচন কমিশনও ব্যস্ত নিজেদের ইমেজ উদ্ধার আর সর্বমহলের আস্থা অর্জনের চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নে। নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য এই নির্বাচনটি বড়ই চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়িয়েছে। নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লার জন্য বিএনপিহীন এই ভোটে ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিজের অবস্থান পোক্ত করে নেয়ায় সেই সুযোগ আর ধরতে পারেননি তিনি। বরং দলের প্রার্থী থাকায় বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ভোট নৌকার বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীর এলাকায় ভোটার সংখ্যাও নৌকার প্রার্থীর এলাকার প্রায় তিনগুন। ভোটের ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতার টান পড়লে অনায়াসেই পার পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জায়েদা খাতুনের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শেষ মুহূর্তে এসে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর পাল্টা-পাল্টি অবস্থান এবং একে অপরের প্রতি বিষোদগার ভোটের মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন প্রার্থী ও সমর্থকদের ক্রোধান্বিত অবস্থানে নগরীতে ত্রিমুখী দ্ব›দ্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। সংসদে প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দীনসহ অন্য প্রার্থীরাও প্রচারণায় বাধা প্রদানসহ নানা অভিযোগ আনছেন। এতে ভোটের পরিবেশ যে কোনো সময় অশান্ত হয়ে ওঠতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।

তবে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থা ইসি বলছে, গাজীপুরে এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক। অবশ্য অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তা মোকাবিলায় পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। কেন্দ্র পাহাড়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশের ভ্রাম্যমাণ টিম নগরজুড়ে প্রহরায় রয়েছে। গাসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ইসির সার্বিক প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ নির্বাচনের ভোটার রয়েছেন ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে টঙ্গী এলাকায় ভোটার রয়েছেন ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭৫২ জন। ওই এলাকার বাসিন্দা আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম। আজমত উল্লা খান সাবেক টঙ্গী পৌরসভার মেয়রও ছিলেন। অপরদিকে সাবেক সদর উপজেলায় ভোটার রয়েছেন ৮ লাখ ১০ হাজার ৭২৪ জন। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন, জাতীয় পার্টির এমএম নিয়াজ উদ্দিনসহ কয়েকজন প্রার্থীর বসবাস। প্রত্যেক প্রার্থী নিজ এলাকার ভোটারদের রিজার্ভ হিসাবে আখ্যায়িত করে অন্য এলাকার ভোটারদের দিকেই নজর বেশি দিচ্ছেন।

তিন-চতুর্থাংশ ভোটকেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ: নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনের ৭৩ দশমিক ১৩ শতাংশ বা তিন-চতুর্থাংশ ভোটকেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর গতকাল মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়ে বলেন, আমাদের কাছে সবগুলো কেন্দ্রই (৪৮০টি) গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ৩৫১টি কেন্দ্র। আর ১২৯টিকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, শিল্প এলাকা বিধায় গাজীপুর সিটিতে বিভিন্ন ধরনের মানুষের বসবাস। তাই অপরাধ প্রবণতাও বেশি। তবে নির্বাচনী পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত ভালো। কোনো থ্রেট না থাকলেও যেহেতু শিল্প এলাকা, তাই দুষ্কৃতিকারীরা বা অসৎ উদ্দেশ্য যাদের থাকে তারা যেন অন্যায় পরিস্থিতি করতে না পারে তাই অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

অবলম্বন করা হচ্ছে বাড়তি সতর্কতা: জানা গেছে, গাসিক নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতে গতকাল মঙ্গলবার থেকে চার দিনের জন্য মাঠে নেমেছে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত থাকবে বিভিন্ন বাহিনীর ১৬ জনের ফোর্স। তবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে নিয়োগ করা হয়েছে ১৭ জনের ফোর্স। এছাড়া ভোটের এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখতে রয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এদের মধ্যে সাধারণ কেন্দ্রে চার জনের হাতে এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে পাঁচ জনের হাতে থাকবে অস্ত্র। পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের ১৯০টি মোবাইল ফোর্স, ৯৪টি স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ১০০টি টিম এবং ৪৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে ভোটের এলাকায়। এছাড়া নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রতিপালন নিশ্চিতের জন্য ১৯০ জন নির্বাহী এবং ৫৪ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট বিভিন্ন অপরাধ আমলে নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ সম্পন্ন করবেন।

ভোটের তথ্য আদান প্রদান হবে ‘হোয়াটসঅ্যাপে’: রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের তথ্য এবার মেসেজিং অ্যাপ ‘হোয়াটসঅ্যাপে’র মাধ্যমে বিনিময় করা হবে। এর মাধ্যমে রিটার্নিং অফিস থেকে নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন নির্দেশনা ও নোটিশসহ যাবতীয় তথ্য এবং কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন তথ্য বিনিময় করা হবে। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য তাদের মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ সবসময় সচল রাখার অনুরোধ করা হয়েছে। যাতে তাদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ রক্ষা করা যায়। তবে নির্বাচন চলাকালে মোবাইল ইন্টারনেটসেবা বিঘিœত হলে বা গতি কম থাকলে তখন মোবাইলেই যোগাযোগ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ভোট পর্যবেক্ষণে মনিটরিং সেল: গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে উচ্চ পর্যায়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। এই সেল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবন থেকে ভোটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের আইডিয়া-দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সায়েমকে প্রধান করে সাত সদস্যের ওই সেল গঠন করা হয়েছে। সেলের অন্য সদস্যরা হলেন, জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব পদমর্যাদার নি¤েœ নয় এমন একজন কর্মকর্তা; পুলিশ হেডকোয়াটার্সের পুলিশ সুপার/অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার নিম্নে নয় এমন একজন কর্মকর্তা; বিজিবি/র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)/আনসার ও ভিডিপির উপ-পরিচালক পদমর্যাদার নিম্নে নয় এমন একজন কর্মকর্তা এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার/সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার নিম্নে নয় এমন একজন কর্মকর্তা।

নগরীতে উত্তাপ; নানা প্রতিশ্রুতি: ভোটে মেয়র প্রার্থী আটজন হলেও দলের মতের বাইরে গিয়ে ভোটে দাঁড়ানো সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন নির্বাচনী উত্তাপ এনেছেন শুরু থেকেই। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লাও ভোটের লড়াইয়ে আছেন সমানতালে। শেষ সময়ের প্রচার-গণসংযোগেও একে অপরকে দুষেছেন তারা। প্রচারের শেষ দিন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ’ হওয়ার বিষয়টি প্রমাণের জন্য এই নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়ার কথা তুলে ধরেন আজমত উল্লা। তিনি বলেন, নির্বাচনই একটা চ্যালেঞ্জ। আমরা যে নির্বাচনটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি যে, নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে এবং বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, এই জিনিসটি প্রমাণিত হবে আগামী পরশু দিনের নির্বাচনে। এটাই হচ্ছে চ্যালেঞ্জ।

ভোটারদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাওয়ার কথা জানিয়ে আজমত উল্লা খান বলেন, আশাব্যঞ্জক সাড়া আমরা পাচ্ছি। নির্বাচনের মাঠে যে অবস্থা বিরাজমান, মানুষ যেভাবে সাড়া দিচ্ছে, যেভাবে তাদের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করছে, সুতরাং ইনশাআল্লাহ, জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর এজেন্টদের হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে আজমত বলেন, হয়রানির কোনো ডকুমেন্ট আছে? বললে তো হবে না। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জন কথা বলবে। আমার পক্ষ থেকে, আমার দলের পক্ষ থেকে কাউকে কোনো হয়রানি করা হয়নি এবং এটা হবেও না।

এদিকে নির্বাচনের শুরু থেকেই নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা ধরনের হয়রানির অভিযোগ করে আসছেন স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী টেবিল ঘড়ি প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। গতকাল প্রচারণার শেষ দিনেও তিনি নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।

লিখিত ইশতেহারে জায়েদা খাতুন বলেন, আমি নির্বাচিত হলে আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের পরিকল্পনা ও তার প্রণিত মাস্টার প্লান অনুযায়ী তার সব অসমাপ্ত কাজ সম্পাদন করব। তার ইশতেহারের দফাগুলো হচ্ছে- প্রথম দফায় রাস্তাঘাট ড্রেনেজ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, দ্বিতীয় দফায় সাধারণ বাড়ি ঘরের আগামী ৫ বছরের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করা হবে। তৃতীয় দফায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, চতুর্থ সড়ক বাতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এছাড়া স্বাস্থ্য সেবা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা, মসজিদ মাদ্রাসার উন্নয়ন, শিক্ষা ও বিনোদন, শ্রমিক কল্যাণ মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন বলে জায়েদা খাতুন উল্লেখ করেন। নির্বাচিত হলে গাজীপুরকে একটি আধুনিক স্মার্ট ক্লিন এবং গ্রিন সিটি হিসেবে গড়ে তুলার কথাও বলেন তিনি।

মহানগরকে একটি পরিচ্ছন্ন সবুজ নগরী গড়ার প্রত্যয়ে ১৯ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন হাতি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনি।

এ সময় রনি সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, গাজীপুরে নির্বাচন নয়, চর দখলের মত মেয়রের চেয়ার দখলের নানা আয়োজন চলছে। গাসিকের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মেয়রের চেয়ার নিয়ে টানাটানি চলছে মন্তব্য করে রনি বলেন, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে বিএনপি বা বিরোধী দলগুলো যে অভিযোগ করে আসছিল আমি এখন এর বাস্তব প্রমাণ পাচ্ছি। নির্বাচন কমিশন শুধুই কথার ফুলঝুরি দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, এটিও সরকারের আজ্ঞাবহ একটি নির্বাচন কমিশন। রনি সরকার ইশতেহারে দুর্নীতি ও হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত একটি সুন্দর ভবিষ্যত প্রজন্ম উপহার দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

শেষ মুহূর্তের হিসাব নিকাশে ব্যস্ত সবাই: আজকের রাতটি পোহালেই বৃহস্পতিবার ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হবে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। নির্বাচনী প্রচারের সময়সীমার শেষ প্রান্তে এসে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা চুলচেরা বিশ্লেষণ এবং হিসাব-নিকেশ কষে ভোটারদের পিছু নিয়ে হন্যে হয়ে ছুটছেন। সবার একটাই উদ্দেশ্য নির্বাচনে জয়ী হওয়া। আর এ জন্য তারা এ নির্বাচনের মূল ফ্যাক্টর অর্থাৎ যাদের ভোটে প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ভাগ্য অনেকটা নির্ধারিত হবে সেই ভাসমান ভোটার যারা অন্য এলাকা থেকে এখানে এসে বিভিন্ন মিল-কারখানায় ও প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন তাদের সমর্থন ও ভোটের প্রতিশ্রুতি আদায়ের চেষ্টা করছেন। এদিকে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের কারণে এবার বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। ফলে ভাসমান ভোটারদের পাশাপাশি নির্বাচনে অংশ না নেয়া বিএনপি সমর্থিত ভোটারদের ভোট এ নির্বাচনের বিজয়ে বিরাট ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় বিএনপির একটি বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে, যা এবারের নির্বাচনেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকের ধারণা। নির্বাচনে বিএনপিপন্থি ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে তাদের ভোটের পাল্লা যে প্রার্থীর পক্ষে ভারি হবে, সে প্রার্থীই সহজে বিজয়ী হবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই নির্বাচনী প্রচার শেষ দিকে এসে এসব ভোটারের গুরুত্ব দিয়ে তাদের খোঁজে ছুটে যাচ্ছেন প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। তারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাতে দিন-রাত পুরো এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন।


poisha bazar