বইমেলায় বিদায়ের সুর


  • সেলিম আহমেদ
  • ১৬ মার্চ ২০২২, ১৫:৫৩,  আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২২, ১৬:০৫

কাল বৃহস্পতিবার পর্দা নামবে এবারের একুশে বইমেলার। তাই শেষ সময়ে এসে মেলায় বিরাজ করছে বিদায়ের সুর। এ কারণে পড়ন্ত বেলায় এসে ধুম লেগেছে বই কেনাবেচার। হাতে সময় না থাকায় এখন যারা মেলায় আসছেন তাদের প্রায় সবাই কিনছেন প্রিয় লেখকদের বই। পাঠকের হাতে তাদের পছন্দের বই তুলে দিতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন বিক্রয়কর্মীরাও। শেষবেলার বেচাকেনাতে খুশি প্রকাশকরাও।

করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় অমর একুশে বইমেলা শুরু করা নিয়ে তৈরি হয়েছিল নানা জল্পনাকল্পনা। অবশেষে পনের দিনের জন্যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় মেলা। এরপর তা বাড়িয়ে ১৭ মার্চ পর্যন্ত করা হয়। সে হিসেবে কাল বৃহস্পতিবারই শেষ হচ্ছে এবারের বইমেলা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মেলার প্রবেশদ্বার খোলার সঙ্গে সঙ্গে মেলায় আসতে শুরু করেন বইপ্রেমীরা। সন্ধ্যার দিকে মেলা লোকে-লোকারণ্য হয়ে ওঠে। হাতে সময় কম থাকায় বই প্রেমীরা বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গণ ঘুরে ঘুরে কিনছেন পছন্দের বই। কেউ আড্ডা দিচ্ছেন প্রিয়জনদের সঙ্গে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল মেলা মাঠ ঘুরে ক্লান্ত হয়ে অনেকে একটু জিরিয়ে বসছেন জলাদ্বারের পাশের ব্রেঞ্চে স্বাধীনতাস্তম্ভের দিক মুখ করে। আকাশছোঁয়া কাচের টাওয়ার, তার তিন পাশে স্বচ্ছ জলরাশি ঘিরে বসে থাকে হাজারো মানুষ।

একাধিক প্রকাশনীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এখন যারা মেলায় আসছেন তাদের প্রায় সবাই বই কিনছেন। কারণ হাতে আর সময় নেই। সবমিলিয়ে এবারের বইমেলার বেচাকেনা নিয়ে সন্তুষ্ট তারা।

বইমেলায় কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী রওশন জাহাদ উর্মির সঙ্গে। তিনি বলেন, মেলায় আগে এসে কয়েকটি বই পছন্দ করে গিয়েছিলাম। আজ এসেছি বইগুলো কিনতে। কারণ হাতে আর বেশি সময় নেই।
অন্যধারা প্রকাশের স্বত্বাধিকারী মনির হোসেন পিন্টু বলেন, মেলার সময় বৃদ্ধি নিয়ে দ্বিধা ছিল। সেজন্যে শুরুর সময়কে মাথায় রেখেই আমরা শুরু করেছিলাম। ওই সময় ভালোই গেছে। আশঙ্কায় ছিলাম পাঠক থাকবে কিনা। তবে মেলা শুরু হওয়ার পর দেখা গেল, পাঠক সমাগম খুবই ভালো হয়েছে।
কথা প্রকাশের ব্যবস্থাপক ইউনুছ আলী বলেন, শুরু থেকেই এবারের বইমেলার কেনাবেচা ভালো। ১৭ দিন সময় বাড়ানোর পর আমাদের ধারণা ছিল হয়ত আগেরমতো বেচাকেনা হবে না। তবে দুই-একদিন পরই ফের জমে উঠে মেলা। আর শেষ সময়ে এসে দর্শনার্থীর থেকে পাঠকরা বেশি আসছে। এখন যারা আসছে সবাই বই কিনছেন।
নতুন বই: গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ১২১টি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- শান্তির প্রবেশ এনেছে রাসেল আশিকীর তিনিট বই ‘নামহীন মহাকাব্য’, ‘ভালোবাসার সিলমোহর’ ও ‘ভাবতরঙ্গের আলো’, বাংলা একাডেমি এনেছে তানভীর আহমেদ সিডনীর ‘বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি চেতনা, বীরেন মুখার্জীর ‘বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠান ও স্পাপনা’, সুবর্ণ এনেছে মুনতাসীর ‘মামুনের একাত্তরে গানে গানে জাগরণী’, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি এনেছে ফকর উদ্দিন তালুকদার, মো. খালিদ আওরঙ্গজেব ও খলিল আহমদ সম্পাদিত ‘ছাদকৃষির সহজপাঠ’ ও ‘পশুপাথি পালনের সহজপাঠ’, আরডিএম মিডিয়া এনেছে মো. জিহাদ সরকারের ‘একজন জিন্নাহ ভারত-পাকিস্তান স্বাধীনতা’, বইঘর এনেছে মুহম্মদ নূরুল হুদার ‘আয় দুখু আয়’, অয়ন প্রকাশন এনেছে দিলু খন্দকারের ‘ক্রীড়া সাংবাদিকতায় চার দশক’, পুথিনিলয় এনেছে ইমরান-উজ-জামানের প্রবন্ধ ‘বাংলাদেশের মেলা পার্বণ’।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে এই বইমেলা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ-তথ্যমন্ত্রী: বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে এই বইমেলা আমাদের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, এই মেলাকে কেন্দ্র করে তরুণদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস জানার আগ্রহ হোক, তরুণরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করুক, তাই হবে বইমেলার সফলতা।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে একুশে বইমেলায় গ্রন্থ উন্মোচন মঞ্চে রাজনীতি বিশ্লেষক রাশেক রহমান রচিত ‘প্রণয়ের রাজনীতি’, কৃষিবিদ সালেহ মোহাম্মদ রশীদ অলক গ্রন্থ ‘গণমাধ্যমে হাতেখড়ি’, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী অবলম্বনে তথ্য ক্যাডার কর্মকর্তা আফরোজা নাইচ রিমার কাব্যগ্রন্থ ‘শতবর্ষে শত কবিতা’, কবি সৌমিত্র দেব সম্পাদিত প্রবন্ধ সংকলন ‘বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশ’ এবং সাংবাদিক সাজেদা পারভীন সাজুর কাব্যগ্রন্থ’ ‘অমপক্ষা’র মোড়ক উন্মোচন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি এম নজরুল ইসলাম, বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু, কবি রেবেকা শিল্পী, গ্রন্থকার, প্রকাশক ও অতিথিবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন বিষয়ক দশটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করলেন শিক্ষামন্ত্রী: গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে আগামী প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত ১০টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বইগুলো হলো- আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ‘ইডিপাসের গল্প এবং বাংলাদেশ’, ড. মেসবাহ কামাল সম্পাদিত ‘একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবী: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নির্মাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড’, আনোয়ারা সৈয়দ হকের ‘বঙ্গমাতা ও দুই কন্যার কথা’ এবং ‘রাসেল তার আব্বুর হাত ধরে হেঁটে যায়’, মোনায়েম সরকারের রচনাবলি ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ (প্রথম খণ্ড)’, অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদারের ‘মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নপূরণে সুশাসন’, বিভুরঞ্জন সরকারের ‘বঙ্গবন্ধু: ইতিহাসের নির্মাতা’, ড. এম আবদুল আলীমের ‘রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলন: জেলাভিত্তিক ইতিহাস’ এবং সিরাজুল ইসলাম মুনিরের ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’। অনুষ্ঠানে কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গণিসহ আরও কয়েকজন লেখক এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন।

মানবকণ্ঠ/এআই


poisha bazar