গৃহকর্মী রেখা স্বামীসহ গ্রেফতার
সৌদি যেতে বৃদ্ধাকে নির্যাতন করে লুট


- অনলাইন ডেস্ক
- ২১ জানুয়ারি ২০২১, ২০:৫৯, আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২১, ২১:১৩
অবশেষে ধরা পড়লো ভয়ংকর গৃহকর্মী রেখা আক্তার (২৮)। ঢাকা ছেড়ে পালিয়েছিলো ঠাকুরগাঁওয়ে। বুধবার গভীর রাতে ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল থানার কাশিপুরের চিকন মাটিয়া মধ্যপাড়ায় মামার বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। পাশাপাশি অভিযুক্তের স্বামী এরশাদ হোসেনকে রাজধানীর বাসাবো এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের হেফাজত থেকে লুটে নেয়া ৫০ হাজার টাকা, স্বর্নালঙ্কার ও মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। তবে চুরি করা টাকার মধ্যে এক লাখেরও বেশি খরচ করে ফেলেছেন তিনি। গ্রেফতারকৃত রেখা পুলিশের কাছে দাবি করেন, স্বামী এরশাদেও নির্দেশে তিনি মালিবাগের ওই বৃদ্ধা গৃহকর্ত্রীকে মারধরের পর টাকা ও স্বর্ণালংকার ছিনতাই করেন। ওই টাকা ও স্বর্ণালংকার বিক্রি করে সৌদিআরব যেতে চেয়েছিলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার শেষ বিকেলে মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোঃ ওয়ালিদ হোসেন।
তিনি বলেন, সোমবার সকালে রাজধানীর মালিবাগের বাসায় একা ছিলেন গৃহকর্ত্রী ৭৫ বয়স্ক বৃদ্ধা বিলকিস বেগম। তখন সুযোগ পেয়ে গৃহকর্মী রেখা আকতার ভিকটিম ওই বৃদ্ধাকে লোহার রড দিয়ে বেদম মারপিট করে গুরুতর জখম করে। এরপর ওই বাসা হতে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, টেলিভিশনসহ আনুমানিক ২১ লক্ষ টাকার মালামাল লুটে নিয়ে পালিয়ে যায় এই ভয়ঙ্কর গৃহকর্মী।
ডিসি জানান, ঘটনার পর প্রথমে ডেমরায় আশ্রয় নেয় রেখা। পরে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পালিয়ে যায় ঠাকুরগাঁওয়ে মামার বাসায়। এরপর রাণীশংকৈল ও বালিয়াডাঙ্গি থানার সীমান্তবর্তী কাশিপুর এলাকার ওই বাড়ি থেকে বুধবার রাত তিনটার দিকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকার শাহজাহানপুর থানার পুলিশ। গতকাল দুপুরে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।
ডিএমপির মুখপাত্র ওয়ালিদ হোসেন আরো বলেন, গ্রেফতারকৃত গৃহকর্মী রেখা আকতার দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে ভিকটিমের মালিবাগের বাসায় গৃহ-পরিচারিকা হিসেবে কাজ করে আসছিল। সম্প্রতি তার স্বামী এরশাদ দ্বিতীয় বিয়ে করে। এরপর টাকার জন্য স্বামী রেখাকে নাকি চাপ প্রয়োগ করে। গ্রেফতারকৃত এরশাদের প্ররোচনায় প্রলুব্ধ হয়ে গৃহকর্মী রেখা আকতার ভিকটিমকে মারধর করে টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায়। গ্রেপ্তারের পর রেখা দাবি করেন, স্বামী এরশাদের পরামর্শে ওই গৃহকর্ত্রীকে মারধরের পর টাকা ও স্বর্ণালংকার ছিনতাই করেন। এই টাকা ও স্বর্ণালংকার বিক্রি করে তিনি সৌদি আরব যেতে চেয়েছিলেন। এর আগেও রেখা সৌদিতে ছিলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিএমপির শাহজাহানপুর থানার এসআই রেজাউল করিম বলেন, গৃহকর্ত্রী বিলকিস বেগমকে নির্যাতন করে স্বর্ণসহ টাকা লুট করার পর রেখা প্রথমে তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে এক জোড়া কানের দুল আর একটি মোবাইলফোন রেখে আবার অন্য একটি স্থানে যান। সেখানেও কিছু জিনিসপত্র রাখেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তারপর সোমবার বা মঙ্গলবারের দিকে নিজের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বেলসাড়া গ্রামে না গিয়ে তার মামা কফিল উদ্দিনের বাড়িতে যান। গ্রেফতারের সময় রেখার কাছে থাকা ৪৯ হাজার ৭০০ টাকাসহ একটি গলার চেইন, চারটি স্বর্ণের চুড়ি, দুটি আংটি ও একটি নাকের নথ উদ্ধার করি।
এর আগে রেখার স্বামী ফরহাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয় জানিয়ে রেজাউল করিম বলেন, স্বামীর দেওয়া তথ্যে ও প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে আমরা রেখাকে অনুসরণ করছিলাম। ফরহাদকে গ্রেফতারের সময় ওই বাসা থেকে লুট করা একটি মুঠোফোন ও কানের দুল উদ্ধার করি।
সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর মালিবাগে সত্তরোর্ধ্ব এক গৃহকর্ত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্মম নির্যাতনের পর স্বর্ণালংকার ও টাকা লুটের সেই দৃশ্য ধরা পরে বাসার সিসি ক্যামেরায়। এতে দেখা যায়, বছর তিনেক ধরে কিডনিসহ নানা সমস্যায় ভোগা ৭৫ বছর বয়স্ক বৃদ্ধা বিলকিস বেগম শুয়ে আছেন বিছানায়। পরম যত্নে তার সেবা করছেন গৃহকর্মী রেখা। একটু পরেই বৃদ্ধাকে বিবস্ত্র করে জোর করে বাথরুমে ঢোকান রেখা। শীতের সকালে বৃদ্ধার গায়ে ঢালা হয় ঠান্ডা পানি। পরে লাঠি দিয়েই বৃদ্ধা গৃহকর্ত্রীকে মারতে শুরু করেন গৃহকর্মী রেখা। একের পর এক আঘাতে বৃদ্ধা মাটিতে লুটিয়ে পড়লেও থামেননি রেখা। একপর্যায়ে হাতের কাছে যা পেয়েছেন তা দিয়েই চালিয়েছেন নির্যাতন। আলমারির চাবির জন্য বুকের ওপর পা তুলে দেন রেখা। বঁটি হাতেও তেড়ে যান। একসময় অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করেন বৃদ্ধা। গলা থেকে চেইন খুলে নিজের গলায় পরে নেন রেখা। হাতের বালাও পরেন।
চাবি দিয়ে আলমারি খুলতে ব্যর্থ হন রেখা। তার পরই অসুস্থ বৃদ্ধাকে টেনে নিয়ে বাধ্য করেন আলমারি খুলে দিতে। ড্রয়ার খুলে স্বর্ণ, টাকা ও মোবাইল ফোন নিজের কব্জায় নেন রেখা। সবকিছু ব্যাগে ভরে বৃদ্ধাকে বাসায় তালা মেরে দেন রেখা। পরে বাসার গেট খুলে ব্যাগসহ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তিনি।
মানবকণ্ঠ/এসকে

