দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন

সিসিটিভির বিকল্প ভাবছে ইসি

গণমাধ্যমের পাশাপাশি পর্যবেক্ষক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত


  • জাহাঙ্গীর কিরণ
  • ২৮ মে ২০২৩, ১৫:৫৪

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সর্বজনগ্রাহ্য করতে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের মতো সব কেন্দ্রে সিসিটিভি স্থাপনের চিন্তা ছিল নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান না পাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভবপর হবে না বলে মনে করছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। যে কারণে সিটি কিংবা বিভিন্ন উপ-নির্বাচনের মতো ইসিতে বসেই মাঠের অনিয়ম চাক্ষুষ করা এবং সে অনুযায়ী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাগ্রহণ অনেকটাই কঠিন হবে। সেই বাস্তবতা উপলব্ধি করেই সিসিটিভির বিকল্প হিসেবে গণমাধ্যমের পাশাপাশি ভোট পর্যবেক্ষক সংস্থা বাড়ানোর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। সাংবিধানিক সংস্থাটি তাই প্রায় লক্ষাধিক পর্যবেক্ষককে ভোটের মাঠের পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দিতে চায়।

ইসি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এরইমধ্যে ২১০টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে নির্বাচন কমিশনে; যেগুলো দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধন পেতে চায়। কমিশনের আইন শাখার যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন আবেদন যাচাই-বাছাই কমিটি এদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছে। যাচাই-বাছাইয়ে যোগ্য বিবেচিত হলে স্থানীয় এসব প্রতিষ্ঠান আগামী পাঁচ বছরের জন্য সংসদ ও স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাবে।

এদিকে আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে একটি সমন্বিত সাংবাদিক নীতিমালা খসড়া প্রস্তুতির কাজও করছে ইসি। ইসির সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আশাদুল হক জানিয়েছেন, পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠানের আবেদন দেখভাল করছে ইসির জনসংযোগ শাখা।

তিনি জানান, এবার ২ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৯৯টি এবং নির্ধারিত সময়ের পরে আরও ১১টি প্রতিষ্ঠানের আবেদন জমা পড়েছে। আগামী মাসের (জুন) প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এসব আবেদন যাচাই-বাছাই হবে। এরপর তা কমিশনে উপস্থাপন করা হবে। প্রাথমিক বাছাইয়ে যাদের আবেদন টিকবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের দাবি-আপত্তি আছে কি না জানতে ১৫ দিনের মধ্যে সময় দিয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। যদি কোনো সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে তাহলে কমিশন উভয় পক্ষকে ডেকে শুনানি দেবেন। শুনানির পর কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বিদ্যমান নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১১ জুলাই। সেক্ষেত্রে ইসির কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী জুনের মধ্যে এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।

সবশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে ১১৯টি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নিবন্ধন দিয়েছিল তৎকালীন কে এম নূরুল হুদা কমিশন। সেসময় ফেমা ও ব্রতী নির্ধারিত সময়ে আবেদন করতে না পারায় নিবন্ধনের বাইরে ছিল। এবার আবেদন করেইনি ফেমা বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান।

তিনি বলেন, তৃণমূলে আমাদের জেলায় জেলায় পর্যবেক্ষক রয়েছে; কিন্তু কেন্দ্রীয়ভাবে সাংগঠনিক কিছু দুর্বলতা থাকায় নিবন্ধন চেয়ে আবেদনই করা হয়নি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, নিবন্ধন চেয়ে আবেদনের নির্ধারিত যোগ্যতার পাশাপাশি গত পাঁচ বছর (২০১৮ থেকে ২০২২ ডিসেম্বর) ধরে যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হয়েও কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেনি সেগুলোর আবেদন বাতিল হবে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালে নিবন্ধিত হতে পারেনি; কিন্তু মেয়াদ থাকাকালীন সংসদ ও স্থানীয় সরকারের সাধারণ বা উপ-নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে থাকলে সেটির আবেদন যোগ্য বিবেচিত হবে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, নবম সংসদ নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন চালু হয়। এক বছর করে মেয়াদ নির্ধারণ করা হলেও পরে তা পাঁচ বছর করে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। ২০০৮ সালে ১৩৮টি প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন দেয় তৎকালীন এটিএম শামসুল হুদা কমিশন। তখন নিবন্ধনের মেয়াদ ছিল এক বছর। ২০১১ সালে নিবন্ধন দেওয়া হয় ১২০টিকে। এগুলোর নিবন্ধনের মেয়াদ ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে শেষ হওয়ার পর কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশন তা আরও এক বছর বাড়ায়।

নবম সংসদ নির্বাচনে দেশি ৭৫টি প্রতিষ্ঠান ভোট পর্যবেক্ষণে থাকলেও দশম সংসদে তা কমে ৩৫টিতে দাঁড়ায়। ২০১৮ সালে আবেদন করে ১৯৯টি, নিবন্ধন পায় ১১৯। একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে ৮১টি দেশি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠানের ২৫ হাজার ৯০০ জন প্রতিনিধি। এছাড়া ৩৮ জন (ফেমবোসা, এএইএ, ওআইসি ও কমনওয়েলথ থেকে আমন্ত্রিত) বিদেশি পর্যবেক্ষক, বিভিন্ন বিদেশি মিশনের ৬৪ জন কর্মকর্তা এবং দূতাবাস ও বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ৬১ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করে।

সমন্বিত সাংবাদিক নীতিমালা হচ্ছে: ভোটের দিন সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত ও অনুমোদন সূচক স্টিকারযুক্ত যানবাহন ব্যবহার করেন। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালার আওতায় এতদিন তা করা হলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এক ডজন নির্দেশনা সংবলিত সাংবাদিকদের জন্য নীতিমালা দেয়া হয়।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহে একটি সমন্বিত সাংবাদিক নীতিমালা খসড়া প্রস্তুতির কাজ চলছে। প্রস্তাবিত নীতিমালা নিয়ে এরইমধ্যে সংবাদমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। যদিও ওই সভায় নীতিমালার কয়েকটি বিষয়ে সাংবাদিকরা আপত্তি জানিয়েছেন।

মানবকণ্ঠ/এআই


poisha bazar