মুনিয়া ধর্ষণ-হত্যা মামলা
আনভীরসহ আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন শুধু ঘুরছে
১৪ বার সময় নিল পিবিআই

- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২২ জুন ২০২২, ১৮:১৪, আপডেট: ২২ জুন ২০২২, ১৯:৩৩
দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা কন্যা ও কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম প্রায় ১০ মাসেও শেষ হয়নি। ফলে আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন দেয়ার তারিখ শুধু ঘুরছে। চাঞ্চল্যকর এ মামলার প্রধান আসামি ও ভিকটিমের প্রেমিক বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার তারিখ আরেকবার পিছিয়েছে। আগামী ১৩ জুলাইয়ে মধ্যে জমা দিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক গোলাম মুক্তার আশরাফ উদ্দিন আজ বুধবার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে ব্যর্থ হলে ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা এ আদেশ দেন। এ নিয়ে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ১৪তম বার সময় নিল পিবিআই। এর আগে গত ১৭ মে ঢাকার আরেকটি আদালত আনভীরের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আবেদন খারিজ করেন ও পিবিআইকে ২২ জুনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন।
মুনিয়ার বড় বোন ও মামলার বাদী নুসরাত জাহান তানিয়ার অভিযোগ, পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এ মামলার তদন্তে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। গত প্রায় ১০ মাসে আনভীরসহ আসামিদের গ্রেপ্তার কিংবা জিজ্ঝাসাবাদের উদ্যেগ নেয়নি তদন্ত সংস্থা পিবিআই। মুনিয়া কার দ্বার অন্তসত্তা হয়েছিলেন, তা নিশ্চিত হতে প্রধান আসামির ডিএনএ টেস্টও করা হয়নি। তদন্ত যেন থমকে আছে । এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের নিরপেক্ষ তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে আলোচিত এ মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক গোলাম মুক্তার আশরাফ উদ্দিনের দাবি, থেমে নেই তদন্ত কার্যক্রম, অগ্রগতিও রয়েছে। তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলে কাজ অব্যাহত রয়েছে।
গত বছরের ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর বড় বোন নুসরাত বাদী হয়ে গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এই মামলাটি করেন। জেলা ও দায়রা জজ বেগম মাফরোজা পারভীন মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলে নির্দেশ দেন। এই চাঞ্চল্যকর মামলায় প্রধান আসামি বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীর (৪২)। পাশাপাশি তার বাবা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান (৭০), মা আফরোজা সোবহান (৬০), আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা (৪০), হুইপপুত্র শার’নের সাবেক স্ত্রী সাইফা রহমান মিম (৩৫), কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, পিয়াসার বান্ধবী ও ঘটনাস্থল গুলশানের ফ্ল্যাট মালিকের স্ত্রী শারমিন (৪০) ও তার স্বামী ইব্রাহিম আহমেদ রিপনকে (৪৭) আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে পিয়াসা ও মিমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর বাইরে সাবরিনা ও ইব্রাহিম আগাম জামিন নিলেও মূল আসামি আনভীরকে আগাম জামিন দেননি উচ্চ আদালত।
এর আগে মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় সেই রাতেই বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন বোন নুসরাত জাহান তানিয়া। সেখানে বলা হয়, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সায়েম সোবহান আনভীর দীর্ঘদিন শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন মুনিয়ার সঙ্গে। ওই বাসায় তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। কিন্তু বিয়ে না করে তিনি উল্টো মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন মুনিয়াকে। পরবর্তীতে নুসরাত দাবি করেন, তার বোনকে পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে আনভীর। প্রায় তিন মাস পর গত বছরের ১৯ জুলাই আলোচিত এ মামলায় আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত ও কর্মকর্তা ও গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল হাসান।
এর প্রেক্ষিতে মামলা থেকে অব্যাহতি পান বসুন্ধরা এমডি। এর প্রতিবাদ ও পুনর্তদন্তের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দেন দেশের ৫১ জন বিশিষ্ট নাগরিক। এতে আসামি আনভীরকে গ্রেফতার কিংবা জেরা না করায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি মামলার সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে ধর্ষণের ও হত্যার অভিযোগে আদালতে নতুন করে মামলা হয়।


