কে আসছেন ইইডি প্রধানের চেয়ারে?


  • জাহাঙ্গীর কিরণ
  • ২০ এপ্রিল ২০২২, ১৫:৪৬

শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মো. আরিফুর রহমানের এই পদে থাকার সময়সীমা আর মাত্র ১০ দিন। আগামী ২৮ এপ্রিল শেষ হচ্ছে তার মেয়াদ। এরপরই গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাটির প্রধান হয়ে আসবেন নতুন মুখ। কিন্তু কে আসবেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার হয়ে আর কে-ই বা বসবেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন, সংস্কার ও সরঞ্জাম কেনাকাটার দায়িত্বে থাকা ইইডির প্রধানের চেয়ারে? শিক্ষাভবনে এনিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। এরইমধ্যে এই পদের জন্য পাঁচজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে যেই আসুক আগের বারের মতো জেষ্ঠ্যতা লঙ্ঘন করে এবার নিয়োগ হবে না এমনটিই প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।   

দেশের সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল, কলেজের শিক্ষা সংক্রান্ত কর্মসূচি বাস্তবায়ন, অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং শিক্ষা খাতের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষা মন্ত্রণালালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান ইইডি। এসব কাজের জন্য নিয়মিত প্রকল্প তৈরি করা হয়। প্রকৌশলীদের দায়িত্বে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়। অনেক প্রকৌশলী প্রকল্প প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারদের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন, সংস্কার ও সরঞ্জাম কেনাকাটা করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইইডির প্রধান প্রকৌশলী পদের জন্য ৫ জন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর নাম উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহ্ নইমুল কাদের প্রথম সারিতে রয়েছেন। গতবার তাকে নিয়োগ না দিয়ে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমানকে (বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী) নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর ঢাকা মেট্রো সার্কেলের দায়িত্বে থাকা শাহ আলম রয়েছেন দ্বিতীয় অবস্থানে। তালিকায় রয়েছেন চট্টগ্রামের দায়িত্বে থাকা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার ও ঢাকা সার্কেলের দায়িত্বে থাকা রায়হান বাদশা। এছাড়া বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মো. আরিফুর রহমানও পুনঃনিয়োগ পেতে তদবির করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (গ্রেড-৩) নন-ক্যাডার পদে পদোন্নতি না দিয়ে ফাইল ফেরত দেন। এতে বলা হয়, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর একটি শূন্য পদে পদোন্নতির জন্য ফিডার পদে আরো জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কর্মরত থাকা সত্ত্বেও এসএসবির বিবেচনার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কনিষ্ঠ কর্মকর্তার নাম প্রেরণ করা বিধিসম্মত নয়। একটি শূন্য পদের বিপরীতে পাঁচজন কর্মকর্তার নাম প্রেরণ করা হলে তাদের মধ্য হতে বিধি অনুযায়ী যোগ্য কর্মকর্তাকে পদোন্নতির সুপারিশ করার এখতিয়ার সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের।

কাজেই একটি শূন্য পদের বিপরীতে ফিডার পদে কর্মরত ৫ জন কর্মকর্তার নাম প্রেরণ করতে বলেন। এতে আরো বলা হয়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর একটি শূন্যপদে পদোন্নতির জন্য ফিডার পদে কর্মরত ও পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জনকারীর কমপক্ষে পাঁচজন কর্মচারীর নাম প্রেরণ করার বিধান রয়েছে। ফিডার পদে কর্মরত অন্যান্য কর্মকর্তাদের প্রত্যেকের নামের পাশে প্রস্তাবিত পদে পদোন্নতির অযোগ্যতার সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখপূর্বক সংশোধিত প্রস্তব প্রেরণের জন্য নির্দেশ করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশের একটি কপি মানবকণ্ঠের হাতে রয়েছে।

ইইডি সংশ্লিষ্টরা জানান, মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনার পর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) এই শূন্যপদটির বিপরীতে ৫ জন কর্মকর্তার নামের প্রস্তাব গত ১২ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। তবে এসব প্রকৌশলীদের অনেকের বিরুদ্ধেই দুর্নীতি-অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, সীমাহীন ঘুষ, সরকারি টাকা আত্মসাৎ ও বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।

ঢাকা মেট্রো সার্কেলের দায়িত্বে থাকা শাহ আলম প্রধান প্রকৌশলী পদের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে অসুস্থ। দীর্ঘদিন দেশ-বিদেশে চিকিৎসা নেন। তার পক্ষে এ দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন অনেকে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা চট্টগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদারের বিরুদ্ধে কুমিল্লা জেলার সহকারী প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তাকে ভোলা জোনের নির্বাহী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

কিন্তু ওই আদেশে ৮ জন কর্মকর্তা নতুন কর্মস্থলে যোগদান করলেও দেলোয়ার হোসেন যোগদান করেননি। তিনি ২০১১ সালের জুন মাসেও কুমিল্লা জেলার সকল উন্নয়ন কাজের বিলে স্বাক্ষর করেন। এদিকে ভোলা কলেজের ভবন নির্মাণের সময় ইইডির ভোলা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন দেলোয়ার হোসেন মজুমদার। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক (ডিপি) মামলা করারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের শেষ দিকে তাকে মাফ করে দেয়া হয়। পাশাপাশি তাকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। বর্তমান ভোলা সরকারি কলেজ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মো. জাকির হোসেন আকন্দকে প্রধান করে উচ্চপর্যায়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। খুব তারাতাড়ি তদন্তের রিপোর্ট সচিবের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে।

ঢাকা সার্কেলের দায়িত্বে থাকা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রায়হান বাদশার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও দায়িত্ব অবহেলার চিত্র বহু পুরনো। গোপালগঞ্জ জেলায় সহকারী প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় তাকে একটি কারণ দর্শনা নোটিশ দেন তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী ইদ্রিস আলী। ময়মনসিংহ জেলার আনন্দ মোহন কলেজের নতুন ছাত্রী নিবাস নির্মাণ কাজ শেষ হলেও কলেজকে বুঝিয়ে দেয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে ঠিকাদারকে চূড়ান্ত বিল পরিশোধ করা এবং ভবনটি অব্যবহƒত অবস্থায় ফেলে রাখার কারণে তার বিরুদ্ধে অসদাচরণের দায়ে বিভাগীয় মামলা রুজুর্পূবক অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণীসহ কারণ দর্শনোর নোটিশ দেয়া হয়। পরবর্তীতে তদন্ত করে ২য় বার কারণ দর্শনার নোটিশ প্রদান করে। পরে দুই বছরের জন্য সাময়িকভাবে বরখাস্ত হন তিনি। অবশ্য সাময়িক বরখাস্তেও এই আদেশ পরবর্তীতে প্রত্যাহার হয়। দিনাজপুর জোনে থাকার সময়ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। তখন মন্ত্রণালয়ের এক উপ-সচিব তদন্তও করেন।

প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মো. আরিফুল রহমানও আবার ওই চেয়ারে বসার জন্য বিভিন্ন তদবির চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। গতবার জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে তাকে এ পদে বসানো হয়। জ্যেষ্ঠতা তালিকায় ৬ষ্ঠ অবস্থানে ছিলেন তিনি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দায়িত্বের অবহেলা, কাজের অদক্ষতা সবচেয়ে বেশি বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। তার মেয়াদে তিনি কোনো নতুন প্রকল্প নিতে পারেননি। দেশের ৯টি জেলায় দীর্ঘদিন ধরে নির্বাহী প্রকৌশলীর পদ শূন্য থাকলেও এসব পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে পারেননি তিনি। ফলে এসব এলাকার উন্নয়ন কাজে শ্লথগতি নেমে এসেছে।

শিক্ষাভবন সংশ্লিষ্টরা জানান, জ্যেষ্ঠতা হিসেবে প্রথম তালিকায় থাকা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহ্ নইমুল কাদের গতবারই প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পাওয়ার কথা। অথচ তাকে না বসিয়ে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে তালিকায় ৬ষ্ঠ অবস্থানে থাকা মো. আরিফুর রহমানকে প্রধান প্রকৌশলীর পদে বসানো হয়। এতে ইইডির কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। এবার প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগ ও নির্বাচনের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী যোগ্য ব্যক্তিকে বসানো হবে এমনটিই প্রত্যাশা সবার।

মানবকণ্ঠ/এআই


poisha bazar