আমাদের নেতৃত্বেও জোট গঠন করতে পারি


  • ছলিম উল্লাহ মেজবাহ
  • ২৭ মার্চ ২০২৩, ১৪:৫০

জাতীয় পার্টি প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি তিনশো আসনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ভালোভাবে। তবে দল তিনশো আসনে প্রার্থী নাও দিতে পারে। সম্ভবত ২৯৯ আসনে নির্বাচন দেব।

দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ভালো চলছে জানিয়ে জাপার প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় এই নেতা বলেন, দলকে সুসংগঠিত করতে সারা দেশে কাজ করছে নেতাকর্মীরা।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে কি জোট হবে বা হবে না, তা আগামী জুন-জুলাইতে বোঝা যাবে। আমরা জোটে যেতে পারি, আবার আমাদের নেতৃত্বেও জোট গঠন করতে পারি। এটি নির্বাচনের পরিবেশের ওপর নির্ভর করবে। সম্প্রতি জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের জম্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর বনানীর জাপা চেয়ারম্যান কার্যালয়ে দৈনিক মানবকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় লিয়াকত হোসেন খোকা এসব কথা বলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির অঙ্গ সংগঠন জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, চলমান মার্চ মাসের বিগত ৪ তারিখে দিনব্যাপী জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির বর্ধিত সভা বনানীতে অনুষ্ঠিত হয়। আগামী তিন মাসের মধ্যে যে সকল জেলায় সম্মেলন হয় নাই, সেসব জেলায় সম্মেলনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে খোকা বলেন, গোলাম মসিহ জাতীয় পার্টির কেউ নন, জাতীয় পার্টিতে তার প্রাথমিক সদস্য পদও নেই। বেগম রওশন এরশাদ ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরকে দেখতে চান।

সাবেক জাতীয় যুব সমাজের এই নেতা বলেন, জনগণের প্রয়োজনে রাজপথের আন্দোলন করতে হলে জাতীয় পার্টি করবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রামে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বাধা দিচ্ছে এমন প্রসঙ্গে বলেন, আমরা অযৌক্তিক সম্মেলন বা সভা সমাবেশ করি না। বিরোধী দলের যেটুকু ভ‚মিকা রাখার দরকার ততটুকু করছি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা তৈরি করতে পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশের পর সারা দেশে দলের কেন্দ্রীয় নেতাসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা মাঠপর্যায়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

জাপার কমিটি প্রসঙ্গে বলেন, দেশের অনেক জায়গায় কমিটি হচ্ছে, আবার অনেক জায়গায় প্রক্রিয়াধীন। তিনি বলেন, ঢাকা বিভাগে আমাদের বেশি সম্মেলন হয়েছে এবং হচ্ছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিগগিরই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি দেয়া হয়েছে। তবে পবিত্র এই রমজানে দলকে ইফতার পার্টির মাধ্যমে বেশি বেশি করে সক্রিয় করা হবে। জাতির সামনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন, সময় বেশি নেই। তার আগেই জাতীয় পার্টির সকল অঙ্গসংগঠনগুলোকে পূর্ণাঙ্গভাবে তৈরি করা হচ্ছে।

দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে যারা মামলা করেছে তাদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জাপার এই নেতা বলেন, মামলাকারীরা দলের কেউ না। আদালত যদি কোনো নির্দেশনা দেয় তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আদালতের বিষয়।’

জাপার ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা। তিনি নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসন থেকে নির্বাচিত দুই বারের এমপি। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি তার আসনে দল ও জনগণের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে।

তিনি বলেন, সোনারগাঁ উপজেলা জাতীয় পার্টি অনেক সুশৃঙ্খল, সুদৃঢ় ও শক্তিশালী সংগঠন। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থেকেই সকল উন্নয়ন কাজ করে যাব। আমি করোনাকালীন আমার নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এলাকাবাসীর পাশে ছিলাম, বর্তমানেও আছি এবং আগামীতেও থাকব। লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, কেউ কোনো কূটরাজনীতি করে আমার উন্নয়ন কাজে বিঘ্ন ঘটাতে চাইলে তা সহ্য করা হবে না।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা দেশ ও জনগণকে ভালোবাসি, তাই উন্নয়নের রাজনীতি করি। কিন্তু শয়তানের অনুসারীদের এটা পছন্দ হয় না, তাই জাতীয় পার্টির সকল নেতাকর্মীকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পার্টির জন্য কাজ করতে হবে। আমরা সবাই একতাবদ্ধভাবে কাজ করলে আগামী নির্বাচনে সোনারগাঁয়ে আবারো জাতীয় পার্টি বিজয়ী হবে, ইনশাআল্লাহ। এসময় তিনি বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান এবং মরহুম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কথা স্মরণ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন ও উপজেলা বৃদ্ধি করণে তার অবদানের কথা তুলে ধরেন।

অতীতের জাপার ভূমিকার কথা স্মরণ করে দলের এই নেতা বলেন, প্রতিটি দল একটি পরিবার। জাতীয় পার্টিও একটি পরিবার। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে গড়া জাতীয় পার্টিতে কয়েক দশক সৈনিক হিসাবে কাজ করে আসছি। চলার পথে এরশাদ বাবার মতো আর রওশন এরশাদ মা’র মতো আমাদের ছায়া দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন- অনেকে ধারণা করেছিল পল্লীবন্ধুর মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টি ভেঙে যাবে। কিন্তু রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের দৃঢ়তায় তা হয়নি। পল্লীবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও পার্টিকে শক্তিশালী করার বিষয়ে সবসময় একযোগে কাজ করেছেন আমাদের পার্টির বর্তমান অভিভাবকদ্বয়। আমাদের চেয়ারম্যান জিএম কাদের সমাজের একজন সজ্জন ব্যক্তি ও যোগ্য সংগঠক। তার ক্লিন ইমেজ ও সাংগঠনিক দক্ষতায় রাজনীতির ময়দানে আমাদের জাতীয় পার্টিকে আরও পাকাপোক্ত করেছে। বেগম রওশন এরশাদ পরিবারসহ সারা দেশের নেতাকর্মীরা জিএম কাদেরের নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধ।

এলাকার উন্নয়ন সম্পর্কে বলেন, সোনারগাঁয়ে ২০ কিলোমিটার রাস্তা ও ১২টি সেতু পুনঃসংস্কারের পরিকল্পনা রয়েছে তার। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁও অংশে ও এর আশপাশের শাখা রোডগুলোতে যানজট নিরসন ও সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও) আসনের দ্বিতীয় মেয়াদে সংসদ সদস্য হয়েছেন মহাজোটের প্রার্থী হয়ে লিয়াকত হোসেন খোকা। এর আগে ২০০৮ সালে সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার নৌকা প্রতীকে জয়লাভ করেছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন থেকে আটজন প্রার্থী নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছিলেন তাদের মধ্যে মহাজোটের প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকা লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে, ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নান ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাই নির্বাচনে লিয়াকত হোসেন খোকা লাঙ্গল প্রতীকে ভোট পান ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৮৫ ভোট। অপর দিকে আজহারুল ইসলাম মান্নান পান ১৮ হাজার ৪৭ ভোট। তার ভোটের ব্যবধান ১ লাখ ৭৯ হাজার ৭৩৮ ভোট।

জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা যেমন স্বাধীনতার স্বাদ পেতাম না, তেমনি এরশাদের জন্ম না হলে এদেশের মানুষ উন্নয়নের স্বাদ গ্রহণ করতে পারতো না। এরশাদ আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি বাংলাদেশে অমর হয়ে থাকবেন।

খোকা বলেন, উন্নয়ন বঞ্চিত এদেশকে আন্তরিক প্রচেষ্টায় জাগ্রত করেছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছিল গ্রাম পর্যায়েও। উনার এ উন্নয়নের ধারা ব্যাহত করতে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। তারপরও তিনি থেমে থাকেননি, আপস করেননি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে। দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, মুল্যায়ন করেছেন মেধার ভিত্তিতে।

তিনি আরো বলেন, ডাক্তার, আইনজীবী, শিক্ষক সমাজ, সাংবাদিক, এমনকি ছাত্রসমাজসহ দেশের প্রতিটি সেক্টর আজ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। উন্নয়ন ও নিরপেক্ষতার স্বার্থে প্রয়াত এরশাদ কখনও এগুলো প্রশ্রয় দেননি। কারণ তিনি চিন্তা করেছিলেন, মানুষকে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে সত্যিকারের যোগ্য ও মেধাবীরা সুযোগ পাবেন না। পাশাপাশি অনেক অযোগ্যরা বড় বড় পদে আসীন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, আজকের নতুন প্রজন্মের মেধাবী প্রতিনিধিরাই আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নতুন প্রজন্মকে নিয়ে ভাবতেন। তেমনি তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নতুন প্রজন্ম। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন বিশ্বমানের শিক্ষা পেয়ে সুনাগরিক হতে পারে।

তিনি বলেন, যেকোনো জায়গার শিক্ষার্থীর সঙ্গে শুধু তাল মিলিয়েই চলা নয়, উন্নত প্রযুক্তিটাও যেন সে আয়ত্ত করতে পারে। সেভাবেই তাদের গড়ে তুলতে হবে। কারণ, আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে শিক্ষার্থীদের বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে হবে।

শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গে লিয়াকত হোসেন খোকা বলেন, ভালো ছাত্রছাত্রী হওয়ার আগে, ভালো মানুষ হতে হবে। ভালো মানুষ হতে হলে ভালো পড়াশোনাও করতে হবে, সুপথে চলতে হবে এবং আলোকিত মানুষ হতে হবে। কারণ এরাই আমাদের ভবিষ্যতের বাংলাদেশ।


poisha bazar