

বিভিন্ন বয়সের সঙ্গে সঙ্গে একেকজন মানুষের শরীরে রক্তচাপের মাত্রা ভিন্ন এবং একই মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে স্বাভাবিক এ রক্তচাপও বিভিন্ন রকম হতে পারে। দুশ্চিন্তা, অধিক পরিশ্রম ও ব্যায়ামের ফলে রক্তচাপ বাড়তে পারে। ঘুমের সময় এবং বিশ্রাম নিলে রক্তচাপ কমে যায়।
রক্তচাপটা স্বাভাবিক মাত্রার ভেতরই থাকে। সাধারণত বয়স যত কম, রক্তচাপও তত কম হয়। যদি কারো রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি হয় এবং অধিকাংশ সময় এমনকি বিশ্রামকালীনও বেশি থাকে, তবে ধরে নিতে হবে, তিনি উচ্চ রক্তচাপের রোগী।
উচ্চ রক্তচাপ ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপের কোনো প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যায় না। এ জন্যই উচ্চ রক্তচাপকে ‘নীরব ঘাতক’ বলা যেতে পারে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত না থাকলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ চারটি অঙ্গে মারাত্মক ধরনের জটিলতা হতে পারে। যেমন- হৃৎপিণ্ড, কিডনি, মস্তিষ্ক ও চোখ। ৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না, একে প্রাইমারি বা অ্যাসেন্সিয়াল রক্তচাপ বলে।
উচ্চরক্তচাপে আক্রান্তের কারণসমূহ -
ধূমপান :
ধূমপায়ীদের শরীরে তামাকের নানারকম বিষাক্ত পদার্থের প্রতিক্রিয়ায় উচ্চ রক্তচাপসহ ধমনি, শিরার নানারকম রোগ ও হৃদরাগ দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ :
খাওয়ার লবণে সোডিয়াম থাকে, যা রক্তের জলীয় অংশ বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তের আয়তন বেড়ে যায় এবং রক্তচাপও বেড়ে যায়।
বংশানুক্রমিক :
উচ্চ রক্তচাপের বংশগত ধারাবাহিকতা আছে, যদি বাবা-মায়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে সন্তানেরও উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশংকা থাকে।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস :
অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার, যেমন- মাংস, মাখন ও ডুবোতেলে ভাজা খাবার খেলে ওজন বাড়বে। ডিমের হলুদ অংশ এবং কলিজা, গুর্দা, মগজ এসব খেলে রক্তে কলেস্টেরল বেড়ে যায়। রক্তে অতিরিক্ত কলেস্টেরল হলে রক্তনালির দেয়াল মোটা ও শক্ত হয়ে যায়। ফলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।
অতিরিক্ত মদ পান :
যারা নিয়মিত অত্যধিক পরিমাণে মদপান করে, তাদের উচ্চ রক্তচাপ বেশি হয়।
ডায়াবেটিস :
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিস রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়।
খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা :
কম চর্বি ও কম কলেস্টেরলযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন- খাসি বা গরুর মাংস, কলিজা, মগজ, গিলা, গুর্দা, ডিম কম খেতে হবে। বেশি আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করা ভালো।
লবণ নিয়ন্ত্রণ :
তরকারিতে প্রয়োজনীয় লবণের বাইরে অতিরিক্ত লবণ পরিহার করতে হবে।
মদপান পরিহার :
মদপান পরিহার করতে হবে।
নিয়মিত ব্যায়াম :
সকাল-সন্ধ্যা হাঁটাচলা, সম্ভব হলে দৌড়ানো, হালকা ব্যায়াম, লিফটে না চড়ে সিঁড়ি ব্যবহার ইত্যাদি।
ধূমপান বর্জন :
ধূমপান অবশ্যই বর্জনীয়। ধূমপায়ীর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকুন। তামাক পাতা, জর্দা, গুল লাগানো ইত্যাদিও পরিহার করতে হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ :
যাদের ডায়াবেটিস আছে, তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
মানসিক ও শারীরিক চাপ সামলাতে হবে :
নিয়মিত বিশ্রাম, সময়মতো ঘুমানো, শরীরকে অতিরিক্ত ক্লান্তি থেকে বিশ্রাম দিতে হবে।
রক্তচাপ নিয়মিত পরীক্ষা :
নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রক্তচাপ পরীক্ষা করানো উচিত।
উচ্চ রক্তচাপ হলে কী চিকিৎসা করাতেই হবে
উচ্চ রক্তচাপ সারে না, একে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এর জন্য নিয়মিত ঔষধপত্র সেবন করতে হবে। কোনোক্রমেই চিকিৎসকের নির্দেশ ছাড়া ঔষধ সেবন বন্ধ করা যাবে না। অনেকেই আবার উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত জানার পরও ঔষধ খেতে অনীহা প্রকাশ করেন।
উচ্চ রক্তচাপ তার দৈনন্দিন জীবনপ্রবাহে কোনো সমস্যা করছে না বা রোগের কোনো লক্ষণ নেই, তাই উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ খেতে চান না। এ ধারণাটাও সম্পূর্ণ ভুল। এ ধরনের রোগীরাই হঠাৎ হৃদরাগ বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, এমনকি মৃত্যুও হয়ে থাকে।
মানবকণ্ঠ/এসএ