করোনাকালে স্বাস্থ্য পরামর্শ
মূত্রনালির সংক্রমণ হলে যা করণীয়
আছিয়া পারভীন আলী শম্পা

- ০৬ জুলাই ২০২০, ১৪:০৮
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যে প্রায়ই মূত্রনালির সংক্রমণে ভুগে থাকেন। সুতরাং, মূত্রনালির সংক্রমণের বিষয়টি সম্পর্কে আমরা কম-বেশি সবাই পরিচিত। মূত্রনালির সংক্রমণ তীব্র কষ্টদায়ক এবং ভীষণ অস্বস্তিকর।
শিশু থেকে বৃদ্ধ কিংবা পুরুষ থেকে মহিলা যে কেউই মূত্রনালির সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে ইউরিন ইনফেকশন বা মূত্রনালির সংক্রমণ মহিলাদের তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। বিশেষ করে, গর্ভবতী মা এবং শিশুরা মূত্রনালির সংক্রমণে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
- যে কোনো ঋতুতেই যে কোনো বয়সের যে কেউ মূত্রনালির সংক্রমণ বা ইউরিন ইনফেকশনে ভুগতে পারেন। তবে নানা কারণে গ্রীষ্মকালে মূত্রনালির সংক্রমণ কিছুটা বেশি হয়।
* মূত্রনালির সংক্রমণ বেশ কিছু কারণে হতে পারে যেমন : ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ, ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিছন্নতা বজায় না রাখা, পর্যাপ্ত পানি পান না করা, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, মূত্রাশয় সম্পূর্ণ খালি হতে সমস্যা হওয়াসহ অন্যান্য অনেক কারণে একজন মানুষ মূত্রনালির সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে বেশির ভাগ মানুষই ই-কোলাই ব্যাক্টেরিয়ার দ্বারা মূত্রনালির সংক্রমণে আক্রান্ত হন।
-মূত্রনালির সংক্রমণের প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইউরিনেশনের সময় জ্বালা-পোড়া করা, ইউরিনে তীব্র গন্ধ, ইউরিনের রং ডার্ক হওয়া, পেলভিক পেইন বা ঘন ঘন ইউরিনের চাপ হওয়া এবং হালকা ফিভার।
সুতরাং, মূত্রনালির সংক্রমণে আক্রান্ত হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়ার পাশাপাশি নিচের টিপস মেনে চলুন।
-প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। কম পানি পান বা ডিহাইড্রেশনের সাথে মূত্রনালির সংক্রমণের সম্পর্ক রয়েছে। নিয়মিত ইউরিনেশনের মাধ্যমে ইউরেনারি ট্র্যাক্ট থেকে ব্যাক্টেরিয়া অপসারণ হয়। যারা, কম পানি পান করে তাদের মূত্রনালির সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সারাদিনে অন্তত ১২ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন।
-মূত্রনালির সংক্রমণ হলে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের পরিমাণ বাড়ান। ভিটামিন-সি ইউরিনকে বেশি এসিডিক করার মাধ্যমে মূত্রনালির সংক্রমণের জন্য দায়ী ব্যাক্টেরিয়াকে প্রতিহত করে।
-এ সময় যে কোনো স্বাস্থ্যসম্মত পানীয় যেমন-ডাবের পানি, গøুকোজ বা চিনি ছাড়া ফলের রস খুবই উপকারী। সুতরাং পর্যাপ্ত পানি পান করার ওপর জোর দিন।
-নিজের ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিছন্নতা খুব ভালোভাবে বজায় রাখুন। প্রতিদিন নিয়মিত গোসল করুন এবং পরিহিত কাপড় নিয়মিত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
-দীর্ঘক্ষণ ইউরিন ধরে রাখার কারণেও মূত্রনালির সংক্রমণের সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং, যখনই ইউরিনের চাপ হবে যতদ্রæত সম্ভব ইউরিন ত্যাগ করা উচিত। এ ছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো প্রতিবার ইউরিনেশনের পর ক্লিন হয়ে টিস্যু পেপারের সাহায্য জেনিটাল এরিয়া ভালোভাবে মুছে নেয়া যাতে জেনিটাল এরিয়া ভেজা না থাকে। কারণ জেনিটাল এরিয়া ভেজা থাকার কারণেও ইউরিন ইনফেকশন হতে পারে।
-প্রতিবার টয়লেট ব্যবহার করার পর ক্লিন হওয়ার জন্য সামনে থেকে পিছনে টিস্যুর সাহায্যে ওয়াইপ করুন। পেছন থেকে সামনে ওয়াইপ করলে ব্যাকটেরিয়া ইউরেনারি ট্র্যাক্টকে ছড়িয়ে যেতে পারে যার ফলে মূত্রনালির সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
-গরম এবং ঘামে যেন জেনিটাল এরিয়া ভেজা না থাকে সেদিকে লক্ষ রাখুন এবং সব সময় ঢিলেঢালা এবং আরামদায়ক সুতি কাপড় ব্যবহার করুন।
-পিরিয়ডের সময় ৫ ঘণ্টা পর পর প্যাড বদলে নিন। জেনিটাল বা ভি এরিয়াতে যে কোনো ধরনের সুগন্ধি প্রোডাক্ট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
-মূত্রনালির সংক্রমণ হলে চা-কফি বা অস্বাস্থ্যকর পানীয় এবং অতিরিক্ত ফ্রাইড ফুড খাওয়া ঠিক নয়। এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি, স্যুপ, পুষ্টিকর খাবার এবং স্বাস্থ্যসম্মত পানীয় পান করুন।
-শিশুরা মূত্রনালির সংক্রমণে আক্রান্ত হলে তাদের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন। ফলের রস, লেবুর শরবত দেয়ার পাশাপাশি একটু পর পর অল্প অল্প করে পানি পান করান। এ ছাড়া শিশুদের পরিষ্কার-পরিছন্নতার ব্যাপারেও বিশেষ নজর দিন।
লেখক-আছিয়া পারভীন আলী শম্পা : পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড।
মানবকণ্ঠ/এইচকে
