নৃশংসতা ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ চাই


- ০১ জুলাই ২০১৯, ১১:২৭
বরগুনার রিফাত হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি নৃশংস ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে দেশবাসীকে। যশোরে একটি কিশোর ছেলেকে কুপিয়ে সন্ত্রাসীরা তার জীবিকার একমাত্র অবলম্বন ভ্যানটি কেড়ে নিয়ে গেছে। সামাজিক গণমাধ্যমে কিশোর ছেলেটির রক্তাক্ত শরীরের ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে গত দুদিন ধরে। যদিও প্রথমে মনে করা হয়েছিল ছেলেটি মারা গেছে। তা নয়। ছেলেটি বেঁচে আছে। তবে অচেতন। ঘটনার দিনই ছেলেটিকে ঢাকায় আনা হয়েছে। জরুরি অপারেশনের পর এখনো তার হুঁশ ফিরে আসেনি।
চিকিৎসকরা বলছেন, মগজে আঘাত লাগার কারণে ছেলেটির জ্ঞান ফিরতে দেরি হচ্ছে। আমরা আশা করি, ছেলেটি অবচেতন অবস্থা থেকে খুব দ্রæত ফিরে আসবে। সুস্থ হয়ে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একটি অসহায় কিশোর ছেলের ওপর যারা এ রকম নৃশংস আঘাত হানল তারা কারা?
এই সমাজে বহু শিশু কিশোর যুবক যখন হতাশা থেকে বা কারো প্ররোচনায় ভুল পথে ধাবিত হচ্ছে তখন এই ছেলেটি সংসারের হাল ধরতে গিয়ে ভ্যান নিয়ে পথে নেমেছে। এইটুকু বয়সে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নেয়ার সৎ সাহস দেখিয়েছে। জীবন যুদ্ধে হতাশ হয়ে ভুল পথে পা বাড়ায়নি। কারো কাছে ভিক্ষার হাত বাড়ায়নি। তাহলে কোন অপরাধে তাকে জীবন-মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে হলো? যে বা যারা তার ভ্যানটি কেড়ে নিতে তাকে দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দিতে চেয়েছিল তারাই বা কারা? ভ্যানটি কেড়ে নিতে একটি কিশোরকে যারা এভাবে আঘাত করতে পারে তারা ভবিষ্যতে সমাজ ও দেশের জন্য যে আরো ভয়ঙ্কর সমস্যার কারণ হবে না তা কী হলফ করে বলা যায়? আমাদের সমাজে এরা কারা এমন নৃশংসতা নিয়ে বেড়ে উঠছে? এর দায় মূলত কার ওপর বর্তায়?
বরগুনায় রিফাত হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বয়স আনুমানিক বিশ বা বাইশের মধ্যে। একই বয়সের একজন যুবককে দু’জন প্রকাশ্যে কুপিয়ে মেরে ফেলছে অদূরে দাঁড়িয়ে আরো সাতজন যুবক তা নির্বিঘ্নে হতে দিতে পাহারায় আছে। দৃশ্যটি কল্পনা করাও কঠিন। অথচ এটা ঘটেছে। এরা কারা? কে বা কারা নেপথ্যে এদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে? কোনো রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয় ছাড়া এলাভিত্তিক কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বেড়ে উঠতে পারে না। আমাদের সামাজিক বাস্তবতা তাই বলে।
ইতোমধ্যে খুনিদের শক্ত রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও কথা উঠেছে। বলা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকার বর্তমান এমপির ছেলের ক্যাডার হিসেবেই রিফাত হত্যার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পরিচিত। নয়ন বন্ড নিজেও ছাত্রলীগের সমর্থক, তবে সক্রিয় কর্মী নয়। অন্যদিকে আরেক খুনি রিফাত ফরাজীর আপন খালু বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রিফাতের চাচাতো দাদা ২০ বছর আগে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন ।
কারো রাজনৈতিক পরিচয় থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে সেই পরিচয় ব্যবহার করে যদি কেউ সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে, প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে খুন করার মতো বীভৎস অপরাধ করার স্পর্ধা দেখায় তবে এর দায় সংশ্লিষ্টদের ওপরও পড়ে। সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে এ ধরনের নৃশংসতা ঠেকাতে হলে সংশ্লিষ্ট সব মহলকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে এ সমাজ নষ্টদের দখলেই চলে যাবে। এটা কারো কাম্য হতে পারে না।
মানবকণ্ঠ/এইচকে
