বৈধ হল ১০ হাজার কোটি টাকা


- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৫ জানুয়ারি ২০২১, ০০:২২
চলতি অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দেয়া হয়েছিল, অনেকেই সেই সুযোগটি নিয়েছেন। গত ১ জুলাই অর্থবছর শুরু হওয়ার পর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ হাজার ৬৫০ ব্যক্তি ঘোষণা দিয়ে অপ্রদর্শিত আয়ের কালো টাকা সাদা করেছেন। এভাবে গত ছয় মাসে প্রায় ১০ হাজার ২২০ কোটি কালো টাকা সাদা হয়েছে। তবে করোনা মহামারীর মধ্যেও চলতি অর্থবছরে দেশে আয়কর দাতার সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ বেড়েছে।
সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ এ মুমেনের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এনবিআরের তথ্য বলছে, গত ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত যেখানে মাত্র সাড়ে তিন হাজার ব্যক্তি কালো টাকা সাদা করেছিলেন, সেখানে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ হাজার ৬৫০ জন অপ্রদর্শিত আয়ের ঘোষণা দিয়েছেন বা কালো টাকা সাদা করেছেন। ফলে ৬ মাসে প্রায় ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা সাদা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ডিসেম্বরেই সাদা হয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। এনবিআরে জমা দেয়া রিটার্ন থেকে জানা যায়, নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, ফ্ল্যাট ও জমি কিনে কালো টাকা সাদা করেছেন ৭ হাজার ৪৪৫ জন। সরকার এই খাত থেকে কর পেয়েছে ৯৩৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আর শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করেছেন ২০৫ জন। তাদের কাছ থেকে সরকার কর পেয়েছে ২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এই কালো টাকা সাদা করার ফলে দেশের অর্থনীতিতে ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা যুক্ত হয়েছে।
এবারের বাজেট বলা হয়েছে দেশের প্রচলিত আইনে যাই থাকুক না কেন, ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের চলতি অর্থবছরে আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারের ওপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা যেকোনো সিকিউরিটিজের ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করলে কর্তৃপক্ষসহ কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না। একই সময় ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করলে, ওই বিনিয়োগের ওপর ১০ শতাংশ কর দিলে, আয়করসহ কোনো কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করবে না। এর বাইরে বিনিয়োগ চাঙা করতে বিদায়ী অর্থবছর থেকে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছে সরকার। সেখানে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকৃত অর্থের ১০ শতাংশ কর দিলেই প্রশ্ন করবে না এনবিআর। ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত এই সুযোগ আছে।
জানা গেছে, এ পর্যন্ত দেশে ১৭ বার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এতে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি টাকা সাদা হয়েছে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে। ওই সময় ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ নিয়েছিল। তখন ৯ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা সাদা করা হয়। তবে দেশে ঘোষণা দিয়ে প্রথম কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল ১৯৭৫ সালে, সামরিক আইনের আওতায়।
আয়কর দাতার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় আড়াই লাখ: করোনা মহামারীর মধ্যেও চলতি অর্থবছরে দেশে আয়কর দাতার সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ বেড়েছে। গতকাল সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ তথ্য জানিয়েছে। বোর্ডের দেয়া তথ্য মতে, গত ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন দাখিল হয়েছে ২১ লাখ ৫১ হাজার ৩২৬টি। এর বিপরীতে কর আদায় হয়েছে ৪ হাজার ১০ কোটি টাকা। গত বছর রিটার্ন জমা পড়েছিল ১৯ লাখ ৯ হাজার ৩৬৭টি এবং কর আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৮ কোটি টাকা। গত ৩১ ডিসেম্বর ছিল রিটার্ন জমা দেয়ার শেষ দিন। আইন করে আয়কর রিটার্নের তারিখ ৩০ নভেম্বর করা হয়েছে। তবে করোনা মহামারীর কারণে বিভিন্ন সংস্থার আবেদনের প্রেক্ষিতে তা এক মাস বাড়ানো হয়েছিল।
আরো সংবাদ
