

বহিরাগতদের উপদ্রব ঠেকাতে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের দরজায় ‘এক্সেস কন্ট্রোল মেশিন’ বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন। আগামী মাসেই মেশিনটি বসিয়ে পুরোদমে চালু হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, শতভাগ নিজস্ব অর্থায়নে কাস্টমস হাউসের দরজায় ‘এক্সেস কন্ট্রোল মেশিন’ বসাচ্ছে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে কাস্টমসের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও করেছে সংগঠনটি। এদিকে প্রকল্পটির বিষয়ে তিনটি প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রাথমিকভাবে আলোচনাও চালাচ্ছে সিএন্ডএফ এজেন্ট। যদিও এখনো ওই তিন প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করছে না সংগঠনের সদস্যরা। প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে নানাবিধ সুবিধা বিবেচনা করে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিতে যাবেন তারা। প্রকল্পটির জন্য ১০ লাখ টাকা বাজেটও নির্ধারণ করা হয়েছে এসোসিয়েশনটি।
চট্টগ্রাম কাস্টমস অ্যাসোসিয়শনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, আমরা কাস্টমসের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা আমাদের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আরেকটি প্রতিষ্ঠান আমাদের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের সাথেও কথা বলব। এরপর নানাদিক বিবেচনা করে একটা প্রতিষ্ঠানের সাথে আমরা চুক্তি করব। পাশাপাশি মেশিন স্থাপনের আগে কাস্টমসের সাথে আমরা একটা সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) করব। কারণ এটা কিভাবে পরিচালিত হবে এবং এটার একটা রক্ষণাবেক্ষণের খরচ আছে। এসব বিষয়ে আমরা আবারো বসবো কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। শুধুমাত্র কার্ডধারীরা মেশিনটি ব্যবহার করে ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে কাস্টমস হাউসে ‘এক্সেস কন্ট্রোল মেশিন’ বসানোর জন্য এনবিআর থেকে অর্থ বরাদ্দও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা কোন উদ্যোগ না নেয়ায় টাকাটা ফেরত চলে যায়। পাশাপাশি কাস্টমসে গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম ও সার্ভার রয়েছে যা বাংলাদেশের রাজস্বকে রক্ষা (প্রোটেক্ট) করে। এদিকগুলো বিবেচনা করেই আমরা উদ্যোগ নিয়েছি যাতে করে কাস্টমসের কর্মপরিবেশটা ভালো থাকে। পাশাপাশি কাস্টমস কর্তৃপক্ষও আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।
কাস্টমস সূত্র জানায়, কাস্টমস হাউসের দাপ্তরিক কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সব ধরনের বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বন্ধে এনবিআরের দেয়া আদেশ এখনও জারি রয়েছে। অথচ এ আদেশ উপেক্ষা করে কাস্টমস হাউসে বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য বাড়ছেই। পাশাপাশি ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস বহিরাগতদের বিষয়ে একটি নোটিশ দিয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, কাস্টমস হাউসে বহিরাগত কাউকে দেখা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এরপরও তারা কাজ করে যাচ্ছিল।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের হল রুম, শুল্কায়ন সেকশন-৩, হিসাব শাখা, শুল্কায়ন সেকশন (বি)-৫ ও অতিরিক্ত প্রশাসন শাখাসহ বিভিন্ন শাখায় বহিরাগতদের আনাগোনা বেশি থাকে। এসব জায়গায় দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে বহিরাগতদের আটক করা স্বত্ত্বেও মেলেনি মুক্তি। গত ২৫ মে কাস্টমসে প্রসেনজিৎ নামে এক বাহরাগতকে আটক করে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের প্রশাসন শাখা। সে লিটন দাশ নামে এক অফিস সহায়ককে দাপ্তরিক কাজে সহযোগিতা করতো। এ অপরাধে লিটনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কাস্টমসের স্পর্শকাতর সফটওয়্যার কক্ষ থেকে দুই যুবককে হাতেনাতে আটক করেছিল আনসার সদস্যরা। সে মামলা এখনো চলমান। এর আগে ২০১৬ সালের ১৪ ও ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম কাস্টমসে আবদুল কাদের, মোহাম্মদ মিজান, মহিন উদ্দিন ও মোহাম্মদ হোসেন নামে চারজনকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি মো. আজগর আলী এবং মো. ওবায়দুন্নবী নামে দুই বহিরাগতকে আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা।
সিএন্ডএফের উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সী বলেন, এনবিআর এক্সেস কন্ট্রোল মেশিন বসাতে আগে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছিল কিনা তা আমার জানা নেই। কিন্তু সিএন্ডএফ এজেন্ট যে উদ্যোগটা হাতে নিয়েছে সেটাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছি। পাশাপাশি কাস্টমসের প্রবেশমুখে মেশিনটি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শুধুমাত্র কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারি ও সিএন্ডএফ এজেন্ট সদস্যরা এর আওতায় থাকবেন। এর ফলে কাস্টমসে বহিরাগতদের আনাগোনা একেবারেই চলে যাবে।
মানবকণ্ঠ/এসএ