সৈয়দপুরে অর্ধেক বাস-মিনিবাসে নেই ফিটনেস সনদ


  • উপজেলা প্রতিনিধি, দৈনিক মানবকণ্ঠ
  • ৩১ মার্চ ২০২৩, ১১:৪৮

ফিটনেস সার্টিফিকেট, রুট পারমিটসহ অন্যান্য কাগজপত্র সঠিক নয় এমন দেড় শতাধিক বাস-মিনিবাস ও কোচ চলাচল করছে নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে আন্ত:জেলাসহ বিভিন্ন রুটে। বাতিল, ফিটনেসবিহীন, লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা বাসগুলো ওয়ার্কসপে রং করে চালানো হচ্ছে সড়কে। এছাড়া এসব বাস-মিনিবাস ও কোচ চালকদের অধিকাংশের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেই। এতে করে যাত্রীদের ভোগান্তির সাথে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা, ঘটছে প্রাণহানি। এমনটি জানিয়েছেন স্থানীয় যাত্রীরা।

তাদের অভিযোগ, সড়কে এসব বাস দীর্ঘদিন ধরে চলাচল করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরব। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি জনবল সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারছেন না তারা।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এর নীলফামারী অফিস সূত্রে জানা যায়, ভৌগলিক কারণে নীলফামারীর সৈয়দপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। স্থানীয় বাসটার্মিনাল হতে আন্তঃজেলাসহ রংপুর, দিনাজপুর ও দিনাজপুরের পার্বতীপুর, ফুলবাড়ি, পঞ্চগড় এবং ঢাকা রুটে পাঁচ শতাধিক বাস চলাচল করে। এসবের মধ্যে নীলফামারীতে রেজিস্ট্রেশনকৃত ৩২৮টি বাস, মিনিবাস ও কোচের মধ্যে ১৭১টির ফিটনেস ও রুটপারমিটের হালনাগাদ সনদ রয়েছে। বাকি ১৫৭টি বাস শর্ত পূরণ করে পরিদর্শন সাপেক্ষে এখনো ফিটনেস বা রুট পারমিট সনদ গ্রহণ করেনি। ফিটনেস ও রুটপারমিট হালনাগাদ করা এই যানবাহনগুলোর বাইরে বেশ কিছু যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কিত জটিলতাও রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সৈয়দপুর বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ফিটনেসহীন এসব গাড়ির ইঞ্জিন ও ব্রেকে সমস্যা, কোনোটির সিট ছেঁড়া, চেচিস ভাঙ্গা। আবার কোনোটির বডিতে রং নেই। বহু পুরনো এসব গাড়ি মেরামত করে নতুন সাজে রোডে নামানো হয়েছে। ফিটনেসবিহীন ভাঙাচোরা গাড়িগুলো জোড়াতালি ও রং দেয়া হচ্ছে বাসটার্মিনাল সংলগ্ন ওয়ার্কশপগুলোতে। ওয়ার্কশপে ফিটনেসবিহীন বাস রং করছেন মিস্ত্রি। ওয়ার্কসপের কারিগররা বলছেন, পুরনো গাড়ি যতই ঠিক করা হোক রাস্তায় নামানোর পর থেকে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায়। তবে একথা মানতে রাজি না বাস মালিকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাস মালিক বলেন, রোডে বাস চললে ছোটখাট ত্রুটি হতেই পারে। আমাদের একটি ইঞ্জিন ও চেসিসের মেয়াদ ন্যূনতম ২০ বছর। এর আগে তেমন কিছু হয় না। রোডে যে দুর্ঘটনাগুলো হয় সাধারণত অসচেতনতার কারণে ও ড্রাইভারদের অসম প্রতিযোগিতার কারণে।

সৈয়দপুর শহরের গোলাহাট এলাকার বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, আমি রংপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। সৈয়দপুর থেকে প্রতিদিন বাসে করে রংপুরে যাই। কিন্তু অধিকাংশ বাসই লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা। অনেটা বাধ্য হয়ে যেতে হয়। প্রতিদিন আমার মতো হাজার হাজার যাত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব বাসে এখান থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে।

নীলফামারী জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি শাহ নওয়াজ হোসেন শানু বলেন, আমরা মালিক সমিতি থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফিটনেসবিহীন গাড়ির মালিকদের জানিয়ে দিয়েছি, যথাযথ কাগজপত্র ছাড়া তারা যেন তাদের যানবাহন রাস্তায় না নামায়। মালিক সমিতি এই বিষয়ে নিজস্ব উদ্যেগে অভিযান চালানোসহ বিভিন্নভাবে তৎপর রয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এর নীলফামারীর মোটরযান পরিদর্শক হিমাদ্রী ঘটক বলেন, জনবল সংকটের কারণে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। তবে জেলার পরিবহন সেক্টরে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও লাইসেন্সেবিহীন চালকদের গাড়ি চালানো বন্ধ করতে অভিযান জোরদার করার কথা জানান তিনি।


poisha bazar