পরকীয়ার জেরে খুন: প্রকাশ্যে ঘুরছে আসামীরা, মামলা তুলে নিতে হুমকি
নাজমুল হক, মাদারীপুর


- প্রতিনিধি, দৈনিক মানবকণ্ঠ
- ০১ অক্টোবর ২০১৯, ১৮:০৪
মাদারীপুরের রাজৈরে পরকীয়া প্রেমের জেরে নাসির শেখ (২৫) নামে এক যুবককে খুনের ঘটনায় মামলা হলেও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে মামলা আসামীরা। বাদীকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে মামলা তুলে নিতে, এমনই অভিযোগ মামলার বাদী নিহত নাসির শেখের বাবা নুর জামাল শেখের।
মামলার নথি ও একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার মোল্লাকান্দি গ্রামের নুর জামাল শেখের ছেলে নাসিরের সাথে একই উপজেলার পশ্চিম রাজৈর গ্রামের ইউনুচ আকনের মেয়ে শিউলি বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছু দিন যেতে না যেতেই শিউলি পরকীয় প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। এনিয়ে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয়। পরকীয়া প্রেমের জের ধরেই ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর রাতে নাসিরকে তার বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে খুন করে লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায় আসামীরা। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মাদারীপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে শ্বাসরোধে মৃত্যু হয়েছে মর্মে প্রতিদেন দেয়। এই ঘটনায় ৯ জনকে আসামী করে রাজৈর থানায় নিহত নাসিরের বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় দুজন মাত্র আসামী গ্রেফতার হলেও বাকি আসামীরা প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় রয়ে যায় ধরাছোয়ার বাইরে। এদিকে গত দুই বছরে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে তিনবার।
মামলার বাদী নুর জামাল শেখ বলেন, আসামী বিলকিস বেগম, হাসান আকন, ইউনুচ আকন, রফেজ আকন বিভিন্ন সময় মামলা তুলে নিতে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। এরা আমাকে বলে মামলা তুলে না নিলে তোর ছেলের মতো তোর দশা হইবে। তাই কিছু টাকা নিয়ে মামলা তুলে নে। এরা হত্যা মামলার আসামী হলেও প্রকাশ্যে থানায় এসে মামলার বিষয় নিয়ে পুলিশের সাথে সালিশ দরবার করে। আমরা থানায় গেলে পুলিশ আমাদের কোন পাত্তা দেয় না।
নুর জামাল শেখ আরোও জানান, মামলার শুরুতে মামলার তদন্তকারী মাসুম দারোগা সততা ও সাহসীকতার সাথে দুজন আসামী ধরে কোর্টে চালান করেছিলো। আসামীরা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতার ভাইয়ের সহযোগিতায় বিভিন্ন জায়গায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাকে এ মামলা থেকে সরাইয়া দিছে। সে যাওয়ার পরে দুই বছরেও আর কোন আসামী পুলিশ ধরে নাই। এছাড়াও মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা রাজৈর থানার এসআই জহুরুল ইসলাম মামলা তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে পারেনি।
নিহতের বাবা বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা জহুরুল আমার কাছে চার্জশীট দেয়ার জন্য এক লক্ষ টাকা দাবী করেছেন। এক লক্ষ দিলে চার্জশীট দিবেন বলে জানিয়েছেন। আমি গরীব, ফেরিওয়ালা। এতো টাকা কোথায় পাবো? আমি কি আমার ছেলে হত্যার বিচার পাবো না?
নিহতের বোন নাছিমা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা মামলা বিষয় কথা বলতে থানায় গেলে থানা থেকে আমাদের বের করে দিয়েছে। আমার ভাইকে ওরা খুন করেছে। এখন এই খুনের বিচারের দাবীতে আমরা আর কত ঘুরবো? গরীবের জন্য কি আইন আদালত নেই? আমরা কি বিচার পাবো না?
তবে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জহুরুল ইসলাম ঘুষ দাবীর বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন ‘তদন্ত কাজ চলছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কিছু বলা যাবে না।’
মাদারীপুর জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান পুলিশের ঘুষ দাবী ও মামলা চার্জশীট না দেয়ার বিষয় গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে রাজি হননি। তবে পুলিশ সুপার এক সপ্তাহের মধ্যেই চার্জশীট দেয়া হবে বললেও তিন সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পরেও কোনো হদিস মিলছে না তদন্তের।
মানবকণ্ঠ/এইচকে
