

মো. সায়েদ আফ্রিদী: বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সাতটা কলেজক গুণগত মানের উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। অধিভুক্তির পর পরই তৈরি হয়েছে দীর্ঘ সেশনজট। যেই সেশনজটের কোনো সুরাহা হয়নি আজ পর্যন্ত। যেহেতু আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল এই কলেজগুলো তখন সবার নিজস্ব স্বতন্ত্র ছিল। আর এখন সবকিছু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে নির্ধারিত হয় বলে দায়িত্বের বিষয়ে সাত কলেজের প্রশাসন অনেকটাই নীরব কিংবা এড়িয়ে যায়।
৮-৯-১০ মাস চলে যায় একেক বর্ষের ফলাফল প্রকাশ করতে। অপরদিকে পরবর্তী বছরের পরীক্ষা রেজাল্ট পরবর্তীই শুরু হয়ে যায়। দেখা যায় রেজাল্ট পরবর্তী কেউ নন-প্রোমোটেড কিংবা ২-১ বিষয়ে ফেল করলেও সময় নিয়ে যে একটু পড়াশুনা করবে সেই সুযোগটা আর থাকে না। দিন শেষে হাজার হাজার টাকা ব্যয়ে ইম্প্র–ভ বা মানোন্নয়ন দিয়েও পাসের মুখ দেখতে পায় না। ফলস্বরূপ বছর-বছর ফেলের বোঝা টানতে হয়।
অধিভুক্তির এতো বছর অতিক্রম হওয়া সত্তে¡ও আজ পর্যন্ত টেকসই কোনো সমাধান হয়নি। সমস্যা হলে সাথে সাথে গোঁজামিল দিয়ে একটা সমাধান দেওয়া হয়। যেটার স্থায়িত্ব নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা না করে কিংবা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়ার মতো নানান অমানবিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়।
ঢাবি এবং সাত কলেজের প্রশাসনের এমন অসহযোগিতা শিক্ষার্থীদের জন্য বেদনাদায়ক এবং অমানবিক। শিক্ষার্থীরা রেজাল্ট কিংবা পরীক্ষা বিষয়ক নানাবিধ ঝামেলার জন্য পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারে না। অনেকেই হতাশ হয়ে পড়াশোনা ছাড়ার উপক্রম এবং অনেকেই ছেড়ে দিচ্ছে।
সাত কলেজের ২-৩টা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান। যেখানকার শিক্ষার্থীরা এদেশের মুক্তিযুদ্ধ থেকে সকল যৌক্তিক আন্দোলন সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। বাকিগুলোও তুলনামূলক ভালো এবং ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অধিভুক্তির ফলে আজ সবাই নিজেদের পরিচয়হীনতায় ভুগছে। পুরনো সেই ইতিহাস-ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
ঢাবি বলছে সাত কলেজের শিক্ষকদের অবহেলা এবং অসহযোগিতা আর সাত কলেজ বলছে ঢাবির অবহেলা। আসলে সমস্যাটা দুপক্ষের! কেউই শিক্ষার্থীদের সুফলের জন্য কোনো সমাধানের পথে হাঁটছে না। ঢাবি নিজের জায়গায় শতভাগ ত্রæটিহীন হলে অবশ্য সাত কলেজের দায়িত্বশীল শিক্ষকদের তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে পারতো। সে অধিকার তাদের নিশ্চয়ই আছে। যেহেতু বোর্ড হিসেবে বলি আর অভিভাবক হিসেবে বলি সবকিছু ঢাবি কেন্দ্রিক বা ঢাবির নিয়ন্ত্রণে।
দুঃখজনক বিষয় হলো- সাত কলেজের সমন্বয়ক কিংবা দায়িত্বশীলরাও নিজেদের সমস্যাগুলো, সংকটগুলো, যথাযথভাবে তুলে ধরে না যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট। তারাও দেখা যায় শিক্ষার্থীদের বিষয়গুলো যথাযথ বিবেচনা না করে ঢাবির সাথে তাল মিলিয়ে চালিয়ে দেয় কিংবা দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
যেহেতু ঢাবির দায়িত্বশীল কেউই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কিংবা আনুষঙ্গিক কোনো বিষয় নিয়ে কোনো ধারণা রাখে না, তাদের অনেক সিদ্ধান্তই শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে যাবে। যেই সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব সাত কলেজের শিক্ষকদের দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে। তারাই পারে শিক্ষার্থীদের সাথে বসে তাদের সমস্যাগুলো, সংকটগুলো, সুবিধা-অসুবিধাগুলোর সমাধানের জন্য শিক্ষার্থীদের মতামত এবং শিক্ষকদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করতে। যার মধ্যে অন্যতম ৯০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা। সকল সংকট মোকাবিলা হবে না যতদিন ঢাবি এবং সাত কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে কোনো সমঝোতা না হবে। তবে মন্দের ভালো হলোÑ শিক্ষার্থীদের বিষয় বিবেচনা করে ফলাফল অতিদ্রæত প্রকাশের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। সকল ফলাফল প্রাপ্তির জন্য যদি রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিতে হয়, নীলক্ষেত কিংবা নিউমার্কেটে মিছিল কিংবা মানববন্ধন করতে হয় তবে এটা শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন লজ্জার বিষয় ঠিক তেমনি দায়িত্বশীলদের জন্যও বিব্রতকর এবং লজ্জাকর। শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সনদ পেলেও বাকিদের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে সনদ দেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর অতিমাত্রায় চাপের কারণে শিক্ষার মান কমে যাওয়ায় ২০১৪ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রিজিয়ন অনুযায়ী সরকারি কলেজগুলো স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তের নির্দেশনা দেন বলে জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অধিভুক্তের বিষয়ে চিঠি দেয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরাও খুশি। তাদের এই খুশির বার্তা সবখানে ছড়িয়ে পড়–ক। সব সংকটের সমাধান হোক- এটাই চাওয়া।
শিক্ষার্থী : ঢাকা কলেজ