বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান


  • অনলাইন ডেস্ক
  • ২২ জুন ২০২২, ১৫:২৬

তারেক রহমান: সিলেট, সুনামগঞ্জ এখন পত্রিকার সংবাদ। প্রতিদিন অসহায়, খাদ্যহীন, বানভাসি মানুষের কান্নায় বাতাস ভারি হচ্ছে। মানবিতকার বিপর্যয় চলছে। দিরাই-শাল্লা উজান ঢলে বিপর্যস্ত। প্রতিটা ছবিতে চোখ ভিজে যায়। মানুষের এত কষ্ট মানুষ হয়ে কিভাবে দেখা যায়? গবাদি জীবনের সঙ্গে মানুষ যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। মেঘালয়-আসামে অতিবৃষ্টির ফলে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারি বর্ষণে সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে আকস্মিক বন্যায় জনদুর্ভোগ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ইতিপূর্বে বন্যার সময় ধান ভেসে গেছে অনেকের। তখন আমরা বলেছিলাম হাওরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কথা।

প্রতিবার বন্যা আসে, মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেই ক্ষতি পোষাতে না পোষাতে আবার বান আসে। কিন্তু এবারে যে বান এসেছে তা কস্মিনকালেও দেখেনি মানুষ। আজ সহজেই মনে পড়ে সেই বাঘ আসা মিথ্যাবাদী রাখালের গল্পের কথা। বাঁধ হবে বাঁধ হবে প্রতিবার পরিকল্পনা হয়। তারপর থেমে যায় সব। এবার যে বন্য হয়েছে তাতে সরকার আগামীতে বাঁধ নির্মাণ করবে কিনা সেটা বড় কথা নয়। এবার যে ভয়াল বন্যা থাবা দিয়েছে সেটাকে প্রতিরোধ করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথমে যদিও ভাবা হয়েছিল বন্যা সিলেট ও সুনামগঞ্জে। এবার কিন্তু উত্তর জনপদ,  ময়মনসিংহ অবধি বন্যা ছড়িয়ে পড়েছে। আসতে পারে ঢাকায়ও কিন্তু এখনও কোনো পরিকল্পনা দৃশ্যত চোখে পড়ছে না। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সংকটের পাশাপাশি স্যানিটেশন সমস্যা দেখা দিয়েছে। বয়স্ক, নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। শহর-গ্রাম নির্বিশেষে মানুষের মধ্যে হাহাকার চলছে। না খেয়ে লাখ লাখ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে।

নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় নলকূপ পানির নিচে চলে যাওয়ায় মানুষজন স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই বানের পানি পান করছেন। বন্যাদুর্গতরা চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন না। সিলেট মহানগরের বেশিরভাগ এলাকা, সুনামগঞ্জ পৌরশহর পুরোটা এবং দুই জেলার অন্তত ২০টি উপজেলায় বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ৪০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি। বাড়িঘর ডুবে যাওয়ার তাদের অনেকে আশ্রয় নিয়েছে ঘরের চালা কিংবা কলার ভেলায়।

অনেক এলাকায় পানির তোড়ে ভেসে গেছে ঘরের ধান-চাল, আসবাব, গবাদিপশু। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যসংকট। বৈরী আবহাওয়া, প্রবল স্রোত, টানা বৃষ্টি, নেটওয়ার্কহীনতা সত্ত্বেও সেনা সদস্যরা বন্যাকবলিতদের সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছে। দ্রুত এই পানি নেমে যাবে না বলে ধারণা বিশেষজ্ঞ মহলের। বন্যার পানি কমলেও মানুষের দুর্ভোগ সহসা কমবে না। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হবে। পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে সেনাবাহিনী। তারা ত্রাণ ও চিকিৎসা দেয়া শুরু করেছে। সেনাবাহিনী প্রধান বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শনকালে সেনা সদস্যদের বলেছেন, কষ্ট যতই হোক মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই দুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী ও কলামিস্ট।

মানবকণ্ঠ/এআই


poisha bazar