শেখ ফজলুল হক মণির বর্ণাঢ্য জীবন

- ০৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:৫০, আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:৪২
সৈয়দ মিজানুর রহমান
৪ ডিসেম্বর, ২০২১ শহীদ শেখ ফজলুল হক মণির ৮২তম জš§দিন। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম এ সংগঠক জনশ্রুতিতে চৌকস রাজনৈতিক পরিচয়ে বিশ্ব সমাদৃত তো বটেই! এছাড়াও দেশের ইতিহাস তাকে ধারণ করেছে একজন প্রজ্ঞাবান সাংবাদিক ও সুলেখক হিসাবে। আপদমস্তক দেশপ্রেমে গড়ে ওঠা এই মানুষটি বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের কারণে বিপ্লবী বীর খেতাব পরিচিতি পান মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই।
শেখ ফজলুল হক মণির পিতা তদানীন্তন ফরিদপুর মহকুমার জমিদার কুদরত উল্লাহ শেখ (কুদ শেখ) এর পূত্র নূরুল হক। তিনি উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করে ব্রিটিশ সরকারের (এজিবি’র) উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন এবং শেখ মণির মাতা আছিয়া বেগম ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় বোন।
শৈশব থেকেই আপন মামা এবং বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদরে অনুকরণে বেড়ে উঠেছেন শেখ ফজলুল হক মণি। সেসময় থেকেই পাকিস্তানি শাষণ-শোষণ বঞ্চনার দাহ্য শেখ মণির রাজনৈতিক দ্রোহে প্রকাশিত হতে থাকে। ছাত্রাবস্থায়ই প্রত্যক্ষ রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন তিনি। তারুণ্যের উত্তাপে মুজিব আদর্শে বলিয়ান শেখ মণি ১৯৬২ থেকে ৬৩ সাল মেয়াদে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং দীর্ঘসময় ছাত্রসমাজের নেতৃত্ব দেন।
১৯৬২ সাল ছিল আন্দোলনমুখর এক অগ্নিগর্ভের বছর। এসময়ে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন সংঘটিত হয়। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার শিক্ষাকার্যক্রম এলিট শ্রেণীর জন্য সংরক্ষিত করে এক রিপোর্ট পেশ করে। শিক্ষাখাতে ব্যয় বৃদ্ধিসহ শিক্ষা হতে লাভজনক মুনাফা আদায়ের উদ্দেশ্যে অবৈতনিক শিক্ষা অবাস্তব ঘোষণা করলে শিক্ষার মৌলিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন সংঘটিত হতে থাকে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট কর্মসূচি পালনের প্রেক্ষিতে গ্রেফতার হন, শেখ মুজিবুর রহমান, তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াসহ অনেকে।
ধারাবাহিকভাবে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিলের দাবিতে ঐ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হন তৎকালীন ছাত্রনেতা শেখ ফজলুল হক মণি। এসময় তাকেও ছয় মাস কারাভোগ করতে হয়। শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনের মুখে পিছু হটে পাকিস্তানের তৎকালীন স্বৈরশাসক ‘ফিল্ড মার্শাল’ আইয়ুব খান। ১৯৬২ সালের ৮ জুন পাকিস্তানের দির্ঘ সামরিক আইনও প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয় তাকে। সেই থেকে শেখ ফজলুল হক মণি বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন সংগ্রামের শক্তি সাহস হয়ে ওঠেন।
১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের এক ঐতিহাসিক গৌরবোজ্জ্বল দিবস। এবারে জাতির শিক্ষার অধিকার আদায়ে আত্মদানের ইতিহাস ঐতিহ্য ছাত্রলীগকে করেছে মহিমান্বিত। শিক্ষা কমিশন আন্দোলনের বীরত্বগাথা ইতিহাসে ১৭ সেপ্টেম্বর তারিখে বাংলার ছাত্রসমাজ ‘শিক্ষা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। শেখ ফজলুল হক মণির দেশপ্রেম, সংগ্রাম ও অধিকার আদায়ে ইতিহাসের অকাট্য দলিলসমগ্র তরুণ প্রজন্মের পড়া ও জানা দরকার।
বিশেষ করে ছাত্রলীগের বন্ধুদের অত্যাবশ্যকীয়ভাবে এই ইতিহাস জানা বাঞ্ছনীয়। ১৯৫৩ সালের সামরিক শাসনামলে পূর্ব বাংলায় সবধরনের রাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধকরে দেয়া হয়েছিলো; দীর্ঘ পটপরিক্রমায় ১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশন আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে স্বৈরাচার আইয়ুব সরকার মার্শাল-ল প্রত্যাহার করে মৌলিক গণতন্ত্র ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। এসময় ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মণি পুনরায় সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের পাশাপাশি আধুনিক চিন্তাধারার সংগ্রাম ও অধিকার আদায়ের প্রতিবাদী কৌশল অবলম্বন করে ছাত্রলীগের দলীয় মনোগ্রাম এবং পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। যে কারনে ছাত্রলীগের দলীয় মনোগ্রাম ও পতাকা তৈরির ইতিহাসে শেখ ফজলুল হক মণির আকুণ্ঠ দেশপ্রেম ও বাঙালির ন্যায্য অধিকার আদায়ের প্রতিবাদী কল্পকাহিনী গচ্ছিত রয়েছে।
১৯৬৩ সালে ছাত্রলীগের জাতীয় কাউন্সিল আহ্বান করে নতুনভাবে ছাত্র রাজনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ছাত্রলীগের দলীয় পতাকা এবং মনোগ্রাম প্রকাশের মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলার অর্থসম্পদ, ন্যায্যতা লুণ্ঠনের প্রতিবাদে সংগ্রামের প্রতীকী বার্তা দেন শেখ ফজলুল হক মণি। তার অনুরোধেই দেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদীন ছাত্রলীগের দলীয় মনোগ্রাম ও পতাকার মৌলিক ধারণা প্রণয়ন করেন। একাজে সহযোগী হিসাবে যুক্তি পরামর্শদানের জন্য বিখ্যাত বাংলা লৌকসাহিত্য শিল্পী অধ্যাপক মনসুর উদ্দিন সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
শেখ ফজলুল হক মণির দেশপ্রেমে সংগ্রাম ও প্রতিবাদের কৌশলগত রূপরেখায় চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক ও চিরায়িত বাংলার ঐতিহ্য নৌকা’কে চলমান, প্রগতিশীল বিবেচনায় ছাত্রলীগের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চলমান ও প্রগতিশীলতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ছাত্রসংগঠনের মনোগ্রামের মধ্যাংশে নৌকার আকৃতি ব্যবহার করেন এবং তৎকালীন পূর্ব বাংলার সোনালি আঁশ ছিল ‘পাট’।
যেহেতু পূর্ব বাংলার কৃষি খাতের স্বর্ণালি ফসল পাটের রফতানিকৃত লাভজনক অর্থের সিংহভাগই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা অন্যায্যভাবে নিয়ে যেত; সেই প্রতিবাদে ছাত্রলীগের মনোগ্রামের দুই পার্শ্বে পাট পাতা আকৃতির ব্যবহার করা হয়েছে এবং শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির উদ্দেশ্য সামনে রেখে তিন তারকা চিহ্ন এবং স্পষ্ট বাংলা অক্ষরে উপরে পূর্ববাংলা ও নিচে ছাত্রলীগ লিখে চিরায়িত বাংলার ঐতিহ্য গাড় সবুজ রঙের পটভূমি ব্যবহারে করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দলীয় মনোগ্রাম প্রস্তুত করা হয়েছিলো।
একই চিন্তাধারায় শেখ ফজলুল হক মণির পরামর্শক্রমে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষিতে শান্তির রঙ সাদা পটভূমিতে সংগ্রামের প্রতীক হিসাবে তিনটা অগ্নিশিখা চিহ্নের উপর শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির মন্ত্রে লাল রঙের তিন তারকা চিহ্নের রূপদিয়ে ছাত্রলীগের দলীয় পতাকার আকৃতি নিরূপণ করেছিলেন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন।
অবশ্য শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের এই রূপকল্প অনুযায়ী ছাত্রলীগের দলীয় মনোগ্রাম ও পতাকা তৈরির শিল্পকর্মে শেখ ফজলুল হক মণির সংগ্রাম ও অধিকার আদায়ের প্রতিবাদী বার্তায় বাঙালির ন্যায্য অধিকার লুণ্ঠনের চিত্রকর্ম চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুললেন তাঁরই ছাত্র তখনকার নামকরা চিত্রশিল্পী হাশেম খান। যা আজো বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দলীয় মনোগ্রাম ও পতাকা হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এভাবেই বাঙালি জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী পথচলায় ছায়াসঙ্গী হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ বপনে ধারাবাহিকভাবে অবদান রাখেন শেখ ফজলুল হক মণি।
১৯৬৪ সালের ২২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনেম খানের আগমনের বিরুদ্ধে শেখ ফজলুল হক মণির নেতৃত্বে ছাত্রনেতৃবৃন্দ সুদৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বিক্ষোভ প্রতিবাদের কারনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে পাকিস্তানি যান্তা শেখ ফজলুল হক মণির এমএ ডিগ্রি বাতিল করে। অবশ্য পরবর্তীতে সময়ে মামলায় জয়লাভ করে আলোচ্য ডিগ্রি ফিরে পান তিনি। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হয়ে দেড় বছর কারা ভোগ করেন। ১৯৬৬’র ছয় দফা থেকে ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি আন্দোলন সংগ্রামের থিংকট্যাংক হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন।
১৯৬৬ সালের ৭ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আটক অন্যান্য জাতীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী শ্রমিক ধর্মঘট পালনের অগ্রভাগে নেতৃত্ব দেন শেখ মণি। ঐ ধর্মঘটে পুলিশের গুলিতে তেজগাঁও শিল্প এলাকায় শ্রমিক নেতা মনু মিয়াসহ সারাদেশে ১১ জন নিহত হয়। এবারেও তাঁকে গ্রেফতার করে দীর্ঘ দুই বছর আট মাস কারান্তরীণ রাখা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে কারারুদ্ধ থাকা অবস্থায় ১৯৬৯ সালে বাঙালির গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে মুক্তিলাভ করেন তিনি। প্রকৃত পক্ষে পুরো ষাটের দশক জুড়েই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ বাস্তবায়নে শেখ ফজলুল হক মণি নিযুক্ত ছিলেন বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনে উপযুক্ত কর্মীদল ও সংগঠন গড়ার কাজে। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক নির্বাচনী ইশতেহারের অন্যতম প্রণেতাও শেখ ফজলুল হক মণি।
ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়েতোলা নেতাকর্মীদের সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধায় পরিণত করে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ সমরে বীরত্বগাথা নেতৃত্বের অর্জনই আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ। শেখ ফজলুল হক মণির ধমনীতে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে নিসৃত ৭ ই মার্চের সেই গর্জন- “এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম! এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম” পরিপূর্ণভাবে কার্যকারিতা লাভ করে।
এরপরে ১৯৭০ সালে নিজেই প্রকাশ করেছিলেন সাপ্তাহিক বাংলার বাণী ম্যাগাজিন যা স্বাধীনতা পরবর্তীসময়ে দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকায় রূপান্তর করা হয়। আগস্টের সেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বিবরণীর স্মৃতিকথায় শেখ ফজলুল হক মণি ও আরজু মণির জ্যৈষ্ঠপুত্র বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক শেখ ফজলে সামস্ পরশ তার লিখা “নির্বাসনের দিনগুলি” শিরোনামে এক প্রবন্ধে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনায় উল্লেখ করেন- “আমার মা মনে হয় বাবাকে অনেক বেশি ভালোবাসতেন। তাই প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়েই মা’ বাবার সামনে মানবঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন।
সেই মুহূর্তে তিনি আমাদের কথাও ভাবেন নাই। মা স্বামীর প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার উদাহরণ রেখে গেছেন। হয়তোবা গুলি লাগার পরে তার আমাদের দুই ভাইয়ের কথা মনে হয়েছে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ফিরে আসার আর উপায় ছিল না। তখনই মা চাচিকে বললেন, “ফাতু আমাকে বাঁচাও। আমার পরশ-তাপস! ওদেরকে তুমি দেইখো।” ওটাই বোধহয় মা’র শেষ কথা।”
অবুঝ দুই শিশুপুত্র শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও শেখ ফজলে নূর তাপসকে রেখে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপ্লবী বীর শেখ ফজলুল হক মণি ও তার সহধর্মিণী শামসুন্নেসা আরজু মণি “১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আন্তর্জাতিক মদদপুষ্ট দেশীয় কিছু সেনা ঘাতকের নির্দয় বুলেট বিদ্ধ হয়ে মৃত্যু আলিঙ্গন করে ইহকাল ত্যাগ করেন। শেখ ফজলুল হক মণি ১৯৩৯ সালের ৪ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী শেখ পরিবারে জš§গ্রহণ করেন। তার পূর্বপুরুষগণ ছিলেন দরবেশ শেখ আউয়ালের বংশধর, যাঁরা উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলাম সাধক হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (র.) -এর ধর্ম প্রচারে সহচর ছিলেন।
মধুমতি নদীর তীরভূমি টুঙ্গিপাড়ার সবুজ শ্যামল গ্রামে শৈশব স্মৃতির মোহমায়া ছেড়ে শেখ ফজলুল হক মণি লেখাপড়ার সুবাদে ঢাকায় আসেন একবুক স্বপ্ন নিয়ে। অধ্যয়ন শুরু করেন নবকুমার ইনস্টিটিউটে; এই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৫৬ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন জগন্নাথ কলেজে এবং ১৯৫৮ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ১৯৬০ সালে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে ভর্তি হয়ে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়ে ১৯৬২ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
এ সময় তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। এছাড়াও কারাবন্দি থাকা অবস্থায় ১৯৬৭ সালে আইন শাস্ত্রে এলএলবি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন বাংলার এই সূর্যসন্তান। স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, যুবরাজনীতির মহাপ্রাণ দূরদর্শীসম্পন্ন রাজনৈতিক, লেখক-সাংবাদিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি” বাংলার ইতিহাসে সংগ্রাম ও সাফল্যের অসংখ্য অকাট্য দলিল রচনা করে গেলেন মাত্র পঁয়ত্রিশ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে। ৮২’তম জš§বার্ষিকীতে তার অমর কীর্তির প্রতি বিশ্ব যুবসম্প্রদায়ের বিনম্র শ্রদ্ধ।
লেখক: সাবেক সভাপতি, ঢাকা মহানগর (উত্তর) ছাত্রলীগ


