পেঁয়াজের উৎপত্তি কোন দেশে?
গোপাল অধিকারী


- ০২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৩৮, আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:২৮
কথায় আছে, ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’। স্বভাবগতভাবেই মাছকে সুস্বাদু করতে পেঁয়াজ লাগে। কারো কম কারো বেশি। নিরামিষভোজীদের নাই বা লাগে। পেঁয়াজ মানুষের দৈনন্দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে একটা। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায় বাংলাদেশের পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী।
আমদানি বা উৎপন্নের অভাব এমন কারণ দেখিয়ে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে পেঁয়াজের দাম। ট্রিপল সেঞ্চুরির সম্ভাবনা দেখছে জনগণ। কেমন যেন ক্রিকেট খেলার দর্শকের মতো দেখছি আর প্রতিক্রিয়া জানানো হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সবার মধ্যে একটা প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে।
আর করবেই না কেন? কথায় বলে পিঠে মারলে সহ্য করা যায় কিন্তু পেটে মারলে সহ্য করা যায় না। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ভঙ্গুর হলে নিরক্ষর শ্রেণির মাথা ব্যথা থাকে না। কারণ সেটা শিক্ষার অধিকার লঙ্ঘন। তারা ভাবে শিক্ষিত সমাজ দেখভাল করবে। যদি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিদ্যমান থাকে তখন রাজনৈতিক নিরপেক্ষরা ভাবে আমি দিন আনি দিন খাই রাজনীতি যা হয় হোক। ভোট আসলে পরিবেশ ভালো থাকলে ভোট দিব না থাকলে যামু না।
এটা রাজনৈতিক অধিকার লঙ্ঘন। কোনো শ্রমিক কোনো কারখানায় বেতন বা যথার্থ পারিশ্রমিক না পেলে ওই প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্য প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা ভাবে না। কারণ তারা তো ন্যায্য মজুরি পাচ্ছে। এটা অর্থনৈতিক বৈষম্য কিন্তু খাদ্যপণ্য নিয়ে কোনো রদবদল হলে সবাই কিন্তু চিন্তা করে বা করবে। কারণ একজন রাজনৈতিক নেতা যে খাবার কিনবে একজন শ্রমিক, একজন শিক্ষক সবাই কিন্তু একই খাদ্যপণ্য কিনবে। হয়তো মূল্যে কম বা বেশি থাকতে পারে।
সামর্থ্য অনুযায়ী কিনবে কিন্তু আমি যাকে পেঁয়াজ বলব সরকারি অফিসার তাকে কিন্তু পেঁয়াজ বা অনিয়ন ছাড়া অন্য কিছু বলবে না। তাহলে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে কেন প্রতিক্রিয়া দেখাবে না? তাই সাধারণ মানুষের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে আমিও শিরোনাম দিলাম ‘পেঁয়াজের উৎপত্তি কোন দেশে?’।
আমার জানা মতে, পেঁয়াজ বাংলাদেশে উৎপন্ন হয়। তাহলে কেন এই দেশিপণ্যের বাজার সরকার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হলো? সরকার ব্যর্থ হলে কেন পেঁয়াজ ব্যবসায় জড়িত সিন্ডিকেট সহনীয় মূল্য রাখছে না? এ দায় কার? জানি রাজনীতিতে ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ এমন পরিস্থিতি আছে। পেঁয়াজের দাম নিয়ে মন্তব্য জানতে চান, সরকারি দলের নেতা বা মন্ত্রীরা বলবে, বিএনপির সিন্ডিকেট পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করেছে।
বুঝলাম বিএনপির কেউ করেছে। আপনারা কী করছেন? বিএনপির নেতা কি আইনের ঊর্ধ্বে? আইন কি পকেটে রেখেছেন? সিন্ডিকেট ভেঙে দেন। জনগণের সামনে হাজির করেন। মুখের কথা তো জনগণ আর মানছে না। বিএনপির কাছে মন্তব্য জানতে চান, বলছে বা বলবে সরকার ব্যর্থ তাই পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। বুঝলাম সরকার ব্যর্থ, তো আপনারা কিছু করে দেখান না? আপনারা তো বলছেন সরকারের পক্ষে জনগণ নেই। জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সেই জনগণকে নিয়ে আপনারা কিছু করে জনগণকে দেখান না? এমন কোনো কাজ কিন্তু আমরা রাজনীতিতে দেখি না। শুধু বক্তৃতা শুনি। শুধু পেঁয়াজ নয়, এমন অনেক বিষয়ে আমরা রাজনৈতিক কৌশলী বক্তব্য শুনি।
যেহেতু বাংলাদেশ উন্নতির পথে তাই এগুলো ঘটতেই থাকবে। সরকারের উচিত ধান বা গমের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোজ্যপণ্যের গুদামজাত করা। যেন প্রতিবছর কোনো না কোনো ক্ষেত্রে জনগণের এমন নাভিশ্বাস না হয়। সেই সঙ্গে ক্যাসিনো অভিযানের পাশাপাশি নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।
যেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বগতি না হয়। কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে দাম বৃদ্ধি দেশের সব নাগরিকের, সব সাফল্যকে ম্লান করে দিতে পারে। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, ‘ক্ষুধার্ত ব্যক্তি কখনো রাজনৈতিক উপদেষ্টা হতে পারে না।’ তার সঙ্গে আমিও একমত পোষণ করে বলতে চাই, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি কোনো দেশের উন্নয়ন চিন্তা করা যায় না। তাই আসুন, সবাই মিলে নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার স্থিতিশীল রাখতে নিজে দায়িত্ব সচেতন হই এবং অন্যকে সচেতন করি।
লেখক-গোপাল অধিকারী: সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী।
