নিউ মার্কেট বন্ধে অন্যত্র চাপ

জমে উঠছে ঈদবাজার

নিম্নবিত্তদের ভরসা ফুটপাত


  • সেলিম আহমেদ
  • ২১ এপ্রিল ২০২২, ১৬:০১,  আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২২, ১৬:০৪

পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই রাজধানীর মার্কেট-শপিংমলগুলোতে বাড়ছে ক্রেতাদের আনাগোনা। জমজমাট ফুটপাতের দোকানগুলোও। বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে গত দুই বছর অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারেননি। এবার করোনার প্রকোপ কমে আসায় যেন প্রাণ ফিরেছে শপিং মলগুলোতে। ক্রেতাদের সরব পদচারণা আর কেনাকাটায় সন্তুষ্ট বিক্রেতারাও।

এদিকে রাজধানীর নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে। এতে ওই এলাকায় অধিকাংশ শপিংমল বন্ধ। ফরে চাপ বাড়ছে অন্য এলাকার মার্কেটগুলোতে। গতকাল বুধবার রাজধানীর পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি, কুড়িলের যমুনা ফিউচার পার্ক, পল্টনের গাজী ভবন, পলওয়েল মার্কেট, চায়না টাওয়ার, বাংলামটরের ইস্টার্ন প্লাজা, মৌচাকের মৌচাক মার্কেট, গুলশান-২ এর গুলশান পিংক সিটি, ফার্মগেটের সেজান পয়েন্ট, শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেট, শান্তিনগর টুইন টাওয়ার, খিলগাঁও তালতলা, গুলিস্থানের পীর ইয়ামিনি, ধানমণ্ডির রাপা প্লাজা, টিকাটুলির রাজধানী সুপার মার্কেটসহ একাধিক মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে মার্কেটগুলো। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ক্রেতাদের আনাগোনা। রমজান মাস থাকায় ইফতারের পর মার্কেটগুলোতে বাড়ে চাপ। কেনাবেচা চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ছেলেদের আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে পাঞ্জাবি-পায়জামা। এছাড়াও অনেকে শার্ট-প্যান্ট, বেল্ট, জুতা, টি-শার্ট, গেঞ্জি কিনছেন। প্রতিবারের মতো এবারের ঈদ বাজারেও তরুণীসহ নারীদের প্রধান আকর্ষণ নতুন কালেকশন। এবার তাই পুষ্পা ও কাঁচাবাদাম নামের নতুন দুটি থ্রি-পিসের প্রতি আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। সম্প্রতি পুষ্পা নামের একটি মুভিতে নায়িকা যে ধরনের পোশাক পরেন এবং ভাইরাল গান কাঁচা বাদামের মিউজিক ভিডিওতে গায়িকা যে ড্রেস পরিধান করে গান গেয়েছেন, সেই দুটি থ্রি-পিসের বেশ কদর রয়েছে। লাল, নীল ও সবুজসহ ৪ রঙের থ্রি-পিস রয়েছে পুষ্পা রাজের। অপরদিকে কাঁচা বাদামের আছে ৬ ধরনের ড্রেস।

ঈদ বাজারে তরুণীদের যেমন আকর্ষণ নতুন মডেলের থ্রি-পিস, তেমনি মধ্যবয়সী নারীদের প্রথম পছন্দ রঙ-বেরঙের বাহারি শাড়ি। বরাবরের মতো জামদানি, কাতান, টাঙ্গাইলের সিল্ক এবং তাঁতের শাড়ি নারীদের চাহিদার শীর্ষে। তাঁতের শাড়ির মূল্য কিছুটা কম হলেও অন্যগুলো ডিজাইনের কারণে বেশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শিশুদের জন্য অভিজাত দোকানগুলোতে রয়েছে দেশের রঙে ও ডিজাইনের পোশাক। তবে অভিভাবকদের অভিযোগ, আগের চেয়ে পোশাকের দাম বাড়লেও সেই তুলনায় কাপড়ের মান বাড়েনি। নি¤œমানের কাপড় দিয়ে তৈরি পোশাকেরও অনেক দাম। ক্রেতাদের ভিড় রয়েছে জুয়েলারি ও কসমেটিক্সের দোকানগুলোতে। কেউ কেউ কিনছেন বাজারে আসা নতুন মডেলের ফোনও।

অন্যদিকে রাজধানীর নি¤œ ও মধ্যভিত্তের কেনাকাটা পছন্দের শীর্ষে রাজধানীর নিউ মার্কেটসহ আশপাশের মার্কেটগুলো। কিন্তু গত সোমবার রাত থেকে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে ওই এলাকার মার্কেট শপিংমলগুলো বন্ধ রয়েছে। জানা যায়, নিউ মার্কেট ছাড়াও চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নূরজাহান, গাউছিয়া ও চাঁদনী চক, নীলক্ষেত, এলিফ্যান্ট রোডের অনেক মার্কেট বন্ধ রয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন; তেমনি ক্রেতারাও ভোগান্তিতে পড়েছেন। বসুন্ধরা শপিং সিটিতে কথা হয় তাসলিমা আরফিন নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, গত দুই বছরের চার ঈদে অনলাইন থেকেই বেশিরভাগ কেনাকাটা করতে হয়েছে। কিন্তু এবার নিজে এসে দেখে-শুনে পছন্দমতো কিনতে পারছি। এটা সত্যিই আনন্দদায়ক। আবারও ঈদের একটা অনুভূতি হচ্ছে। বাস্তবে শপিং করতে না পারলে ঈদের আমেজটা আসে না ওইভাবে।

একই মার্কেটে বাবা-মায়ের সঙ্গে কেনাকাটা করতে এসেছে স্কুল শিক্ষার্থী সাদ্দিভ ইসলাম। নিজের পছন্দমতো জিন্স প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জি, জুতা, চশমা, ঘড়িসহ অনেক কিছু কিনেছে সাদ্দিভ। তার পছন্দমত সবকিছু কিনে দিতে পেরে তার বাবা মা-ও অনেক খুশি। সাদ্দিভের কলেজ শিক্ষক বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘দুই বছর ঈদে মার্কেটে এসে শিশুদের পছন্দমতো কেনাকাটা করে দিতে পারিনি। তারা প্রায়ই মন খারাপ করত। তা পূরণ করতাম অনলাইনে। এবার স্বশরীরে এসে সন্তানের এবং নিজের পছন্দ অনুযায়ী কিনতে পারছি, এটাই ভালো লাগছে।’

বসুন্ধরা সিটির টপ টেনের ব্রান্ড ম্যানেজার আবু সাইদ বলেন, ‘দুই বছর পর আমরা ভালোভাবে ব্যবসা শুরু করতে পারছি। এবারের ঈদে আমরা দুই বছরের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করব। শুক্রবার ক্রেতাদের সমাগম বেশি থাকে।’ একই শপিংমলের ইনফিনিটি ব্র্যান্ডের ম্যানেজার সুমন মিয়া আশাবাদী হয়ে বলেন, দুই বছর ধরে আমরা লসের মধ্যেই ছিলাম। দোকান খুলেও সবকিছুর ভাড়া দেয়া লাগছে। এবার ক্রেতারা মার্কেটে আসছেন। আশা করছি এবার ক্রেতা আসতে থাকলে ব্যবসা সফল হবে। রাজধানীর টিকাটুলী এলাকার রাজধানী মার্কেটের ঢাকা শাড়ি কালেকশনের বিক্রেতা নূরুল ইসলাম বলেন, ক্রেতার উপস্থিতি আরো বাড়বে ২২-২৩ রোজার পর। এখন শাড়ির দোকানের চেয়ে থ্রি-পিস, থান কাপড় ও ছোটদের পোশাক, জুতার দোকানে কেনাকাটার ভিড় বেশি। শাড়ির দোকানে ঈদের আগে আগে বেচাকেনা বেশি হয়।

মার্কেট-শপিংমলের পাশাপাশি ফুটপাতের দোকানগুলোতেও বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। পরিবারের সদস্যদের জন্য সাধ্যের মধ্যে পোশাক ও প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে ফুটপাতের দোকানগুলোতে ভিড় করছেন নি¤œ আয়ের মানুষ। তাদেরই একজন ফয়সাল মিয়া। পেশায় রিকশাচালক। ফার্মগেটের তেজগাঁও কলেজের সামনের ফুটপাত থেকে কাপড় কিনছিলেন ফয়সাল। তিনি বলেন, বাড়িতে আমার তিন ছেলে, দুই মেয়েসহ স্ত্রী ও মা-বাবা রয়েছেন। তাদের জন্য মার্কেট থেকে কাপড় কিনতে গেলে অনেক টাকার প্রয়োজন। কিন্তু এত টাকা পাব কই? তাই এখান থেকে সবার জন্য কাপড়-চোপড় কিনতে এসেছি। আসলে নতুন কাপড় ছাড়া ঈদ জমে না।

মানবকণ্ঠ/এআই


poisha bazar