নিরাপত্তা সঙ্কটে জবির নতুন ক্যাম্পাসে অবাধে চুরি

- বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, দৈনিক মানবকন্ঠ
- ২৫ মে ২০২২, ১২:৪০
ঢাকার কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় দুই'শ একর ভূমির উপর চলছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ। ভূমি অধিগ্রহণের পর সেখানে এখন সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ চলমান। কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মীর সঙ্কটে প্রায়ই ঘটছে বড় ধরণের চুরির ঘটনা। রাতের আঁধারে নির্মাণাধীন সীমানা প্রাচীরের পিলারের রড, সাটারসহ বিভিন্ন মেশিনারি যন্ত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে প্রায়ই৷ অথচ, চুরি বন্ধে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি কর্তৃপক্ষকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের একেবারে পূর্ব অংশে ১১টি নির্মাণাধীন পিলারের গ্রেডবিমের ওপর বেরিয়ে থাকা মোট ৪৪টি রড রাতের আঁধারে কেটে চুরি করে নিয়ে গেছে চোরচক্র। এছাড়াও ক্যাম্পাসের পশ্চিম অংশে নির্মাণসামগ্রী রাখা একটি ঘরের সামনে থেকে সাটার, রডসহ বিভিন্ন সামগ্রী চুরি হয়েছে।
সেখানে কর্মরত একজন শ্রমিক জানান, আমরা এখানে নিরাপত্তা সঙ্কটে আছি। প্রায়ই রাতের বেলা চুরি হচ্ছে। কিছুদিন আগে নিরাপত্তাকর্মীরা স্থানীয় এক চোরকে ধরে পিটুনি দিয়ে ছেড়ে দিলে ওই চোর তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে এসে নিরাপত্তা কর্মীদের ওপর হামলার চেষ্টা করে। কোনোমতে এখান থেকে কাজটা শেষ করে চলে যেতে পারলে বাঁচি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের এলাকায় রয়েছে স্থানীয় মাদকসেবীদের আখড়া। ফলে, মাদকের টাকা জোগাড় করতে রাতের আঁধারে নির্মাণ সামগ্রী চুরি করতে হানা দিচ্ছে তারা। কিছুদিন পর পর খুনের ঘটনাও ঘটে থাকে সেখানে।
সেখানকার কর্তব্যরত এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, বিগত কয়েকমাসের ভেতর নানা সময়ে আমরা এখানে গলাকাটা দুই তিনটি গলাকাটা লাশ দেখতে পেয়েছি। এসব ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। এলাকাটিতে সন্ত্রাসী চক্রের অপতৎপরতা আছে।
এ সময় নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণে কর্মরত শ্রমিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা সেখানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের দাবি জানান। যাতে করে শ্রমিকরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বলয়ে থেকে কাজ করতে পারে।
এ সময় আরও দেখা যায়, নতুন ক্যাম্পাসে নির্মিত অস্থায়ী খেলার মাঠের মাটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভেঙে পাশের নিচু ভূমিতে পড়ছে। পুরান ঢাকার ধূপখোলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র খেলার মাঠটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক দখলের পর নতুন ক্যাম্পাসে অস্থায়ী খেলার মাঠ নির্মাণের ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে, এখনও মাঠটি খেলার জন্য পুরোপুরি উপযোগী না হওয়ার সম্পূর্ণ থমকে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া কার্যক্রম।
দেখা গেছে, নতুন ক্যাম্পাসের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ চলছে অতি ধীরগতিতে। ২০০ একর ক্যাম্পাসের প্রাচীর নির্মাণে সেখানে মাত্র একটি পাইলিং মেশিন ও একটি মাটি কাটার ভেকু দিয়ে কাজ চালাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংডম বিল্ডার্স। এ বছরের জুলাইয়ের ভেতর সীমানা প্রাচীরের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও বাস্তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হওয়ার কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছেনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেখানকার একজন কর্মচারী জানান, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হওয়া প্রায় অসম্ভব। কেননা, সামনে বর্ষা মৌসুম আসছে। তখন এই নিচু ভূমি তলিয়ে যাবে। ফলে পিলার ঢালাই দেয়া তখন সম্ভব হবে না।
এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল জানান, চুরির ঘটনায় আমি ওখানে আগে কয়েকবার পুলিশ পাঠিয়েছি।
ক্যাম্পাস নির্মাণকাজের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওখানে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা পুলিশের আইজিপি বরাবর আগেই আবেদন করেছি যেন সেখানে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়। বিষয়টি ডিআইজি হয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে।


