

কবিতা শিল্পের কঠিনতম মাধ্যম। মানুষ সুন্দরকে আবিষ্কার করে তার অনুভূতির মধ্য দিয়ে। সুন্দর আসলে কি? আমি ভাবি সৃষ্টিকর্মের মধ্যে বেঁচে থাকা শিল্পকে বেচে না খেয়ে বাঁচা জীবনের সুন্দরতম পাঠ। সুন্দর এক একজনের কাছে এক এক রকম। ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ সুন্দর খুঁজতে গিয়েছেলেন অঙ্গচ্ছেদের মধ্য দিয়ে। ভার্জিল মৃত্যুকে ভালোবেসে, র্যাঁবো, সের্গেই ইয়েসিনিন.মায়াকোভস্কি কতজন বিশাল সারি। চাওয়া সুন্দরের আবাহনে বেঁচে থাকা। জীবনানন্দ পরাজিত পাখির পালকে সুন্দর খুঁজেছেন। দার্শনিক প্লেটো তার আদর্শ রাষ্ট্রে কবিদের স্থান দেননি। কিন্তু নিজে কবিতা লিখতেন। কার্ল মার্কস, লেনিন, হোচি মিন, ল্যু সুন কবিতা লিখতেন না? কবিতা সবার ভিতরে বাস করে।
গ্রিক কবি হোরেস তার আর্সপোয়েটিকায় লিখেছেন, কবিতার ইতিহাস প্রাচীন এবং অনেকের মতে কবিতা কৃষি জীবনেরও আগের, বিনিময় প্রথারও। আর শিল্পতাত্তি্বক ক্রিস্টোফার কডওয়েলের বলেছেন ‘কবিতা হচ্ছে যৌথ সামাজিক ক্রিয়া বা জোটবদ্ধ সামাজিক ইতিহাস।’ কবিতা তাই কোনো উদযাপনের বিষয় নয়। কবিতা বাহবা কুড়ানোর কিছু নয়।
কবিতা জীবন, কবিতা বেঁচে থাকা। নিজের ভেতরে নিজের পাশা খেলা। একজন শ্রমিক, একজন মজুর, একজন হাত সম্বল মানুষ। যার মাতৃভাষার নাম ক্ষুধা-ঘাম শ্রমে যে আঁকে জীবনের নতুন ইস্তেহার- সেইসব মানুষের জন্য কবিতা হবে কাস্তে-হাতুড়ির মতো মুক্তির লিফলেট। সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে এখন কবিদের উপস্থিতি বেড়েছে। অজস্র কবিতার ভিড়ে কোনোটা ছুঁয়ে যায় কোনোটা ছুঁতে পারে না। এটা আপেক্ষিক। কবিতা সমাজ বিপ্লবের ভাষা নির্মাণ করার একটি শৈল্পিক বোধ। জীবনানন্দের বিপন্ন বিস্ময়।
আশা বাঁচে, আশায় আশায়
কেমন আঁধার নেমে আসে ছাইরঙা আকাশ থেকে।
গভীর রাতে জোছনার গন্ধ মেখে টের পাই, ফুসফুসের ভেতরে হেঁটে বেড়ায়
বহু পোকা, পিঁপড়ের দল। তবু কফি রঙের পুষ্পলতা বেয়ে চলে বহতা নদীর মতো।
ব্যস্ততায় খুঁজেছি যাকে বারোমাস, সে এখন ব্যস্ততা থামিয়ে দিয়ে শুয়ে থাকে সাদা বিছানায়।
সেখানে ন্যাপথলিনের ঘ্রাণ নেই। স্যাভলনের ঘ্রাণ আসে।
দূর থেকে দেখি বেদনা ক্ষত রেখে গেছে তার মুখে।
তার হাসি এখন ক্যানোলা পরানো হাত।
আমি যেন কত বোঝা নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
বড় ক্লান্ত। গভীর রাতে নেমে আসে জিউসের ঈগল
আমিও টের পাই ফুসফুসে পোকাদের রেস।
রাত হলে সব অসুখ নেমে আসে শরীরের ভেতরে
তখন সকালের আশাগুলো ঢেউয়ের মিছিল হয়ে ভাঙে পাড়,
চিরচেনা পাড়। আজ, কাল পরশু দেখতে দেখতে
পোকাগুলো উঠে আসবে ভেতর থেকে নাসিকা অবধি।
জলের শরীরে ভাসা কচুরিপানা গন্ধ ছড়াবে ঠিকই।
পাট পচা ঘ্রাণ নিতে নিতে মনে হবে, আশা বাঁচে
আশায় আশায়
তোমার বাড়ি আসছি কিন্তু
কলুই শাকের আমন্ত্রণে
চারখানা মেঘ সেলাই করে
সামনে ঈদে তোমার বাড়ি আসছি তবে।
কোর্মা পোলাওর গন্ধ ব্যাকুল বৃষ্টি ধোয়া
চাঁদের আসর জ্যোৎস্নারাতে লেকের ধারে
আসছি তবে, অনেক স্বপ্ন মাথায় ভরে চারখানা মেঘ সেলাই করে
কফি কালারের রোদমাখানো জারুল ছায়া
ভালোবাসার রৌদ্র খেলায় আসছি তবে
তোমার বাড়ির পথগুলো সব পাঠিয়ে দিও মুঠো ফোনে।
রেলটা যদি টেক্সট করে দাও দিতেও পারো।
মেঘপিওনের কাছে দিও রান্নাগুলোর তালিকটা।
ইচ্ছে করলে রান্নাগুলো চুলোয় থাকার গন্ধগুলো বিকাশ করো।
দিতেই পারো আসছি কিন্তু আসছি তবে
আসবো দুটো দুপুর নিয়ে
ঈদের দিনে খুশির মেলায়
হচ্ছে দেখা, দেখাদেখি, আসছি তবে
এখানে কেউ নেই
আমি আমার সব ভোরগুলো হারিয়ে ফেলেছি
শিশির ভেজা কলুইয়ের ক্ষেত, যিশুর ক্রুশের মতো
সটান পড়ে থাকে গাঁয়ের পথ আমি হারিয়ে ফেলেছি।
মা হারিয়ে গেলে চেনা পথগুলো হারিয়ে যায়
সব হারা আমি রুটি-রুজির জন্য হাতুড়ি শাবল চালাই
নাগরিক জীবনের ইস্পাতে।
এখানে বন্ধুত্ব থাকে না। বন্ধু থাকে না।
সবই সময়ক্ষেপণ কিংবা স্বার্থান্বেষণের লীলা খেলা।
এ খেলায় টিকে থাকতে যে যোগ্যতা লাগে তার
আলপথ চলে গেছে দৃষ্টি সীমার বাইরে।
যেখানে বুঁচি বক নেই, নেই প্লাস্টিক বা
অ্যানিমেশনের জীবন উৎসারিত পুঁজির জগত।
আমি সব হারিয়ে দেখি রাতের অন্ধকারে চিরে
তবুও ভালোবাসি
ঠোঁট, কপোল, মধ্যমা আঙুল লকারে রেখে
ভালোবাসা হয়? হয় না বুঝেই ভালোবাসো না।
ভালোবাসার মতো টুয়েন্টি-নাইন খেলা
আমি সে দলে নই, তাই বুথ হয়ে ভালোবাসি বেলা- অবেলা।
ভালোবাসে রেল লাইন পাশাপাশি চলে
তোমার দ্বন্দ্বরেখা বড়ো দোলাচলে
তোমার চোখের মাঝে যত দৃশ্য আসে
আকাশে হেলান দিয়ে সবাই কি বাসে?
কতটুকু আর চাওয়া
কতটুকু আর চাওয়া, একটু বৃষ্টি, একটু জল,
বৃষ্টি ভেজা দুপুর, ময়লা ধোয়া তারে কাক,
পাতার ভাঁজে সজীবতা।
কতটুকু আর চাওয়া দূরের একটা গ্রাম।
পাশেই ছোট নদী। টিনের ঘরের চালা।
বাইরে মাটির চুলো
খড়ের জ্বালে জ্বলে, দূরে ছোট হাট, হাটুরে সব দিন।
কতটুকু আর চাওয়া, ভাতের সঙ্গে মাছ, ছোট বাটির ডাল।
কী আর এমন চাই, একটু যদি পাই
মানবকণ্ঠ/এআই