ঘুণে ধরা সমাজ বদলে দেবে ‘জ্ঞানী তৈল সিং’


- জাহাঙ্গীর কিরণ
- ০৮ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৪৩
প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সমাজের উপকার করতে পারলেও ঘুণে ধরা সমাজকে আমূল বদলে দেয়ার বাসনা বিরামহীন পীড়া দিত অতিরিক্ত সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানকে। কিন্তু সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়া এতোসব অসঙ্গতি দূর করবেন কিভাবে সেই ভাবনা যখন কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল তখনই সমাজ সংস্কারে লেখনী চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের এই পরিচালক। বিরামহীন রাত জেগে ভাবনার ডালপালাগুলো মেলে ধরেন কলমের আঁচড়ে। লিখে ফেলেন পাঠকপ্রিয় রম্য রচনার বই ‘আমার বন্ধু জ্ঞানী তৈল সিং’।
তার এই অনবদ্য সৃষ্টি সমাজ বদলে দেয়ার নায়ক চরিত্র ‘জ্ঞানী তৈল সিং’কে দেশবাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেয় আগামী প্রকাশনী। এবারের বইমেলায় রম্য রচনার এই বইটি অপ্রত্যাশিত পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে বইটির প্রথম সংস্করণ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় সংস্করণও নিঃশেষিত। এখন তৃতীয় মুদ্রণের কাজ চলছে।
প্রকাশনী সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সদ্য সমাপ্ত কলকাতা আন্তর্জাতিক বই মেলাতেও বইটি ভালো চলেছে এবং তারা জানতে পেরেছেন সাভারের একটি কলেজসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তরুণ পাঠক/শিক্ষার্থীরা আবু হেনা মোরশেদ জামানের ‘জ্ঞানী তৈল সিং’-কে নিয়ে আনন্দ শোভাযাত্রা করেছে।
বইটির লেখক জানান, বইটির এত পাঠকপ্রিয়তায় তিনি নিজেই খানিকটা বিস্মিত। তার ভাষায়- বইটি বীরবল, গোপাল ভাঁড় বা মোল্লা নাসির উদ্দিনের আদলে তৈরি করা হয়েছে কিন্তু এই চরিত্রটি ইতিহাসের কোনো কিংবদন্তি চরিত্র বা কোনো রাজা রাজরার মোসাহেবের মতো কোনো চরিত্র নয়। সমসাময়িক সমাজের সাধারণ মানুষের কথা বলে এমন একজন লোক হচ্ছেন ‘জ্ঞানী তৈল সিং’, যিনি ননসিরিয়াস রম্য গল্পের মাধ্যমে সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরেন। সে কারণেই হয়তো এটি পাঠকদের ব্যাপক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাই বইটির সিক্যুয়ালও লেখা হয়েছে। ‘আমার বন্ধু জ্ঞানী তৈল সিং-২’ নামে এই বইটিও বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
লেখকের আরো দুটি বই পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছে। এবারের বইমেলায় প্রকাশনী সংস্থা অনিন্দ্রপ্রকাশ নিয়ে এসেছে লেখকের গল্পগ্রন্থ ‘অ্যানি গাঙ্গুলি পাখি নয়’। বইটিতে লেখকের শৈশব স্মৃতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। প্রথম ছড়া গ্রন্থ ‘তোমার জামার বোতাম ঘিরে’ নিয়ে এসেছে জাগৃতি প্রকাশনী।
সরকারি চাকরিতে এতোবড় দায়িত্ব পালন করেও লেখালেখিতে সময় দিচ্ছেন তিনি। কিভাবে এই সময় বের করেন এমন প্রশ্নের হাসিমাখা উত্তরে আবু হেনা মোরশেদ জামান জানান- রাত ১১টার পর বাসায় বসে তিনি লেখালেখির কাজটি করেন। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি লেখালেখি করছেন বলে জানান।
আবু হেনা মোরশেদ জামান বিসিএস (প্রশাসন) ১১তম ব্যাচে প্রথম স্থান অধিকার করে চাকরি জীবনে প্রবেশ করেন। সুদীর্ঘ কর্মকালে তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে ও দেশের বাইরে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ মাঠ প্রশাসন পর্যায়ে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছেন। এক্ষেত্রে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং ফরিদপুর ও নরসিংদীতে জেলা প্রশাসক হিসেবে তার দায়িত্ব পালন উল্লেখযোগ্য।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের ব্যক্তিগত সচিব এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বিগত ১২ বছর ধরে তিনি ইউনিসেফ স্পন্সরড বিটিভিতে প্রচারিত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত ছিলেন। আবু হেনা মোরশেদ জামান সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন ২০২০ সালের ২ জুন।
এর অব্যবহিত পূর্বে তিনি বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন (বিএনসিইউ), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

