দায়িত্ব নিচ্ছে না প্রশাসন-পুলিশ-বনবিভাগ, অসহায় পঞ্চায়েত

প্রৌঢ়ার মৃত্যুতেও ক্ষান্ত নয় মৌমাছির দল, আক্রমণে আহত ৩৬


  • সংবাদদাতা, দৈনিক মানবকণ্ঠ
  • ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ১৭:১১

মৌমাছির আক্রমণে আজ আহত হলেন ৩৬ জন লোক। ঘটনাটি ঘটেছে শিলচর শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে সোনাবাড়িঘাট নামের একটি আধা শহরে। আহতদের মধ্যে স্কুল-কলেজের পড়ুয়া, রাজমিস্ত্রি, গৃহশ্রমিক ও গ্রামের নাগরিকরাও রয়েছেন। তবে শুধু আজকের ঘটনা নয়। মৌমাছি যন্ত্রণায় এক সপ্তাহ ধরে এলাকার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রায় অচল হওয়ার পথে।

কারণ, মৌমাছির কামড়ে যন্ত্রণাভোগ করে গত শনিবার এলাকার এক মহিলা মবরুন নেসা বড়ভূঁইয়ার মৃত্যু হয়েছে। এলাকার পঞ্চায়েত সভাপতি জানিয়েছেন, সোনাবাড়িঘাট বাজার থেকে খানিকটা দূরে সড়কের পাশে মৌমাছি বাসা বেধেছে। সপ্তাহখানেক ধরেই মৌমাছির দল বিক্ষিপ্তভাবে আক্রমণ করছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার ওই সড়ক ধরে এগোনোর পথে মৌমাছির দল বছর ষাটের মহিলা মবরুন নেসাকে আক্রমণ করে। দলবদ্ধ আক্রমণে মহিলা এতটাই অসহায় হয়ে পড়েন যে তাঁর কান্না অনেক দূর অবধি পৌঁছায়। উপায়ন্তর না পেয়ে ওই মহিলা পাশের একটি পুকুরে ঝাঁপ দেন। পরে পুকুর থেকে তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাবাড়িঘাট প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকের সুপারিশে তাঁকে শিলচর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার সকালে মবরুন মারা যান।

সকালের ঘটনা শুরু হয় এক স্কুটিচালককে আক্রমণ দিয়ে। ওই যুবক স্কুটি চালিয়ে যাওয়ার পথে মৌমাছির আক্রমণে আক্রান্ত হয়ে মাটিতে গড়াগড়ি শুরু করেন। অন্যরা দৌড়ে এসে তার গা থেকে মৌমাছি ঝেড়ে ফেলেন। এরপরেই দুই ছাত্রী আক্রান্ত হয়। ইউনিট টেস্ট দিতে স্কুলে যাচ্ছিল তারা। আরও পরে গ্রামের দুই বয়স্ক মহিলার গায়ে কামড় বসায় মৌমাছির দল। এভাবে শুধু আজই একে একে ৩৬ জন লোক আক্রান্ত হয়েছেন বলে স্থানীয়দের ভাষ্য। এদের কাউকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবং অন্যদের ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে। ফলে এলাকাজুড়ে মৌমাছি ভয়ে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। শিশু ও কিশোরদের চলাফেরায় অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু মৌমাছি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায়ও খুঁজে পাচ্ছেন না স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

আজকের ঘটনার পর গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ প্রথমে বনবিভাগের সোনাই রেঞ্জ অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বনবিভাগ জানিয়ে দিয়েছে যে মৌমাছি তাড়ানোর দায়িত্ব তাদের নয়। কাছাড় জেলা প্রশাসনের অধীন দুর্যোগ মোকাবিলা ও প্রতিরোধী কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পঞ্চায়েতকে বলা হয়েছে যে মৌমাছির কামড়ে দুর্যোগ সৃষ্টি হয় বলে তারা মনে করেন না। ঘটনাবহুল এলাকাটি রয়েছে শিলচর সদর থানার রাঙ্গিরখাড়ি পুলিশ ফাড়ির অধীনে। জিপি সভানেত্রীর স্বামী ইনামুল হক মজুমদার লেটারহেডে ঘটনার বিবরণ লিখে দুই গ্রুপ সদস্যকে পুলিশের কাছে পাঠান। পুলিশ ইন্ডিয়ান প্যানেল কোডের ধারা-উপধারা আওড়ে দুই সদস্যকে বলেছে— মৌমাছি চুরি করেছে, না ডাকাতি করেছে যে তাদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়া হবে! এমন আতঙ্কের আবহে মৌমাছির দল অবশ্য নির্ভয়ে মৌচাক ঘিরে রেখেছে।


poisha bazar