নেতাদের বাসাবাড়িতে হাজিরা দিচ্ছেন পদপ্রার্থীরা

আ.লীগের উপ-কমিটিতে স্থান পেতে চলছে জোরালো তদবির

বাদ পড়বেন বিগত কমিটির নিষ্ক্রিয়রা


  • রফিকুল ইসলাম
  • ০৪ মার্চ ২০২৩, ১৭:২৯

শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের উপ-কমিটি গঠনের তোড়জোর। বিতর্কমুক্ত ও ক্লিন-ইমেজের সাবেক ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এদিকে উপ-কমিটিতে স্থান পেতে চলছে জোরালো তদবির। দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে দলটির সাবেক ছাত্রনেতা ও বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীরা। তারা নেতাদের ব্যক্তিগত অফিস, বাসাবাড়ি ও দলীয় কার্যালয়ে নিয়ম করে হাজিরা দিচ্ছেন। তবে আ.লীগের নেতাদের দাবি- বিতর্কমুক্ত, ক্লিন-ইমেজ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এমন সাবেক ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে উপ-কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। কোনো ভাবেই বিতর্কিতদের কমিটিতে স্থান দেয়া হবে না। এছাড়াও বিগত দিনে যারা কমিটিতে থেকেও নিষ্ক্রিয় ছিলেন, তাদেরও রাখা হবে না এবারের উপ-কমিটিগুলোতে।

তথ্যসূত্রে, গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিল। ওই কাউন্সিলে দলে বড় কোনো পরিবর্তন করেনি ক্ষমতাসীন দলটি। অধিকাংশ নেতাই স্ব-পদে বহাল রয়েছে। এর মধ্যেই চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি দলের উপ-কমিটির চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান ও সদস্যসচিবদের নাম ঘোষণা করা হয়। তবে তাদের নাম ঘোষণার দীর্ঘদিন পার হলেও এখনও উপ-কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি। তবে আ.লীগের নেতাদের দাবি- একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিবেচনায় বিতর্কমুক্ত, ক্লিন-ইমেজ, যোগ্য, ত্যাগী, পরিশ্রমী, মেধাবী এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এমন সাবেক ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে উপ-কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বিশেষ করে উপ-কমিটিগুলোতে যেন কোনোভাবেই বিতর্কিত, হাই-ব্রিড, ভিন্ন-মতদর্শী ও বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির সাথে যুক্তরা স্থান না পায়, এজন্য পদ-আগ্রহীদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অল্প কিছু দিনেই মধ্যেই কমিটিগুলো গঠনের কাজ শেষ করা হবে বলে দাবি তাদের।

আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মানবকণ্ঠকে বলেন, আমাদের গত উপ-কমিটি অনেক ভালো কাজ করেছে। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছে দায়িত্বপ্রাপ্তরা। সেই বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে এবারের কমিটিতে তেমন কাউকে বাদ দেব না। যারা কাজ করেনি বা নিষ্ক্রিয় ছিল, তাদের বিষয়ে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। নিষ্ক্রিয়দের স্থানে নতুন কাউকে সংযুক্ত করা হতে পারে। এই কমিটিতে বিতর্কিতদের স্থান পাওয়ার সুযোগ নেই।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উপ-কমিটিতে স্থান পেতে ইতোমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন দলটির কয়েক হাজার নেতাকর্মীরা। এদের অধিকাংশই সাবেক ছাত্রনেতা। থেমে নেই বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীরাও। দলের উপ-কমিটিতে স্থান পেতে ইতোমধ্যে সম্পদকীয় পদে থাকা নেতাদের ব্যক্তিগত অফিস, বাসাবাড়ি, দলীয় কার্যালয় ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা সকাল-সন্ধ্যায় নিয়ম করে হাজিরা দিচ্ছেন। দলের উপ-কমিটিতে স্থান পেতে তুলে ধরছেন নিজের ব্যক্তিগত অবস্থান।

আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. নজিবুল্লাহ হিরু মানবকণ্ঠকে বলেন, উপ-কমিটি গঠনে ইতোমধ্যে দল থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী এবার কমিটি গঠন করা হবে। তিনি আরও বলেন, যারা আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান, বিগত দিনে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। যারা দলের নীতি আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাদের নিয়েই এবার উপ-কমিটি গঠন করা হবে। কোনোভাবেই বিতর্কিতদের কমিটিতে স্থান দেয়া হবে না।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচন বিবেচনায় দলের মতো উপ-কমিটিগুলোতে বড় পরিবর্তন করতে চায় না আওয়ামী লীগ। যারা উপ-কমিটিতে থেকে বিগত দিনে নিজেদের কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, তাদের রাখা হচ্ছে তা প্রায় নিশ্চিত। তবে বিগত দিনে উপ-কমিটিতে থেকেও যারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন, দলের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেনি, করোনাকালীন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি, যাদের কারণে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে, তাদের আর এবারের কমিটিতে রাখা হচ্ছে না।

অল্পকিছু দিনেই মধ্যেই কমিটি গঠনের কাজ শেষ করা হবে দাবি করে আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা মানবকণ্ঠকে বলেন, এবার কমিটি গঠনে বেশকিছু বিষয় গুরুত্ব দিয়েই করা হচ্ছে। কমিটিতে যেন বিতর্কিত কেউ ঢুকতে না পারে, সে বিষয়গুলোও আমলে নেয়া হচ্ছে। সব মিলে এবারের কমিটি অনেক ভালো করা হবে। মহিলাবিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম মানবকণ্ঠকে বলেন, কমিটি গঠনের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আশা করি একটি ভালো কমিটি হবে।


poisha bazar