দেশের অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে: ফখরুল

- অনলাইন ডেস্ক
- ১৮ মে ২০২২, ১৯:৩০
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একধরনের অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমদানি আয় বৃদ্ধি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয়ে ঘাটতি এবং রিজার্ভ কমে আসায় দেশের অর্থনীতিতে ‘অশনিসংকেত’ দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে দেশে অর্থনৈতিক নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতা চলছে। এ জন্য সরকার দায়ী।
আজ বুধবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন।
সোমবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করে যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে তা সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ যে শ্রীলঙ্কার মতো বিপদে পড়তে পারে সে আশঙ্কাও আছে। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একধরনের অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স আয়ে ঘাটতির কারণে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে। টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে অসহনীয় হয়ে উঠেছে জিনিসপত্রের দাম। আগামীতে পরিস্থিতি আরো বেসামাল হয়ে উঠতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, রিজার্ভ নিয়ে আত্মতুষ্টির কিছু নেই। এটি দ্রুত কমে আসছে। গত আট মাসে রিজার্ভ ৪৮ বিলয়ন ডলার থেকে ৪২ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। পরের দুই মাসে এটা আরো চার বিলিয়ন ডলার কমে যাবে। এভাবে যদি রপ্তানির তুলনায় আমদানি বাড়তে থাকে এবং সেটা যদি রেমিট্যান্স দিয়ে পূরণ করা না যায় তাহলে অতিদ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভ শেষ হয়ে যাবে। রিজার্ভ শেষ হওয়ায় কী ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে শ্রীলঙ্কার চলমান পরিস্থিতি তার নিকৃষ্টতম উদাহরণ।
বাংলাদেশে এ মুহূর্তে যে রিজার্ভ রয়েছে তা দিয়ে মাত্র পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'আমদানি ব্যয় আমাদের বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। আমদানি যে হারে বেড়েছে, রপ্তানি সে হারে বাড়েনি। আবার প্রবাস আয়ও কমে গেছে। ফলে প্রতি মাসে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। '
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, 'ডলারের দাম ১০০ ছাড়িয়েছে। পত্রিকায় দেখলাম, কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার ১৯৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে। সরকার ৬.২২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির কথা বলছে। কিন্তু এটি বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। শহরের চেয়ে মূল্যস্ফীতি গ্রামে বেশি। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের চেয়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেশি। ' তার অভিযোগ, সরকার তাদের ব্যক্তিগত অর্থের ঝোলা ভর্তি করতে অনেকগুলো অপ্রয়োজনীয় মেগাপ্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। মেগাপ্রকল্প মানেই মেগাদুর্নীতি।
ঢাকা-যশোর-পায়রা পর্যন্ত নির্মণাধীন রেলপথ এবং চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার, ঘুনধুম রেলপথ প্রকল্প দুটির অর্থনৈতিক ‘ফিজিবিলিটি’ ভবিষ্যতে খুব লাভজনক নয় বিধায় এই প্রকল্প দুটি বন্ধের দাবিও করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির বৈঠক বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বুলেট ট্রেন, দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, পূর্বাচলে ১১০ তলা বঙ্গবন্ধু বহুতল ভবন কমপ্লেক্স, শরীয়তপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া দ্বিতীয় পদ্মা সেতু, নোয়াখালী বিমানবন্দর, দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প এবং ঢাকার বাইরে রাজধানী স্থানান্তর―এই আটটি প্রকল্প বন্ধের দাবি জানিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি।
তিনি দাবি করেন, স্যাটেলাইট-১ তৈরি ও উৎক্ষেপণে বাংলাদেশের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। গত চার বছরেও কোনো অর্থ আয় করতে পারেনি। স্থায়ী কমিটি মনে করে, শুধু ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল ও ‘গ্ল্যামারাস’ উন্নয়নের ডামাডোল বাজাতেই এ ধরনের অপরিণামদর্শী প্রকল্প গ্রহণ করে দেশকে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন করা হয়েছে। স্যাটেলাইট প্রকল্পে অভিজ্ঞদের নিয়োগ না করে দলবাজদের নিয়ে এর কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে তদন্তের দাবিও জানান তিনি।
মানবকণ্ঠ/এআই


