বিএনপিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা চালাবে আওয়ামী লীগ

- সাইফুল ইসলাম
- ০৯ মে ২০২২, ১৭:০৪, আপডেট: ০৯ মে ২০২২, ১৭:২০
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল যেন অংশগ্রহণ করে সেই চেষ্টাই চালাবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে। সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। আগামী নির্বাচন যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় সেই চেষ্টাও করবে তারা। দলের নেতাকর্মীরা বারবার জনগণের কাছে গিয়ে ভোট চাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এজন্য বিএনপিসহ অন্যান্য সব রাজনৈতিক দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক তা নিশ্চিত করতে চায় আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে একাধিক নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এমনকি অনুষ্ঠিত বৈঠকে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করতে হবে। বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন করেই আওয়ামী লীগ জয়ী হবে। জনগণ আওয়ামী লীগকেই আবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক মানবকণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপি নিশ্চয়ই চাইবে, আমরা তাদের নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেই, নিরপেক্ষ হবে, সুষ্ঠু হবে, প্রতিযোগিতামূলক হবে? সেটা করার জন্য অবশ্যই আমরা নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করব এবং তাদেরকে নিশ্চয়তা দেব। প্রধানমন্ত্রী সুষ্পষ্টভাবে বলেছেন- সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে। সেই পরিবেশ সৃষ্টি করব। মানুষের আস্থা আসবে। নির্বাচনে কোনো রকম প্রভাব বিস্তার করা হবে না। প্রভাবের ঊর্ধ্বে থাকবে। সরকারি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকেও সেভাবে নির্দেশ দেয়া হবে। যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলের নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আগামী সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে হবে। এ জন্য দলের নেতাকর্মীদের আরও বেশি করে জনগণের কাছে যেতে হবে। ভোট চাইতে হবে।’
বৈঠক সূত্র মতে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোট অনুষ্ঠিত হবে ইঙ্গিত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচনে সব আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট হবে। ফলে যাদের জনপ্রিয়তা আছে তারাই কেবল জিততে পারবে। কোনো কারচুপির সুযোগ নেই। আমি সবার এলাকার খোঁজ নিচ্ছি। কার কেমন জনপ্রিয়তা আছে সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছি। যাদের এলাকায় অবস্থান নাই তারা মনোনয়ন পাবেন না।
সূত্রে আরো জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বিএনপিসহ সব দলকেই আগামী নির্বাচনে আনা যায় কিনা, সে বিষয়ে কৌশল গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরে এ প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ কেন বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে যাবে?
এ সময় মাহবুব-উল আলম হানিফকে তিরস্কার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এলেই বুঝি তোমার সুবিধা হয়। তোমার এলাকায় ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরেছে। তুমি নির্বাচন করলে তো তারাই হারিয়ে দেবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় আর হবে না। নির্বাচন করেই সবাইকে জিতে আসতে হবে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে হবে। তাদের নির্বাচনে আনার জন্য প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগই নেয়া হবে। বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন করেই আওয়ামী লীগ জয়ী হবে। জনগণ আওয়ামী লীগকেই আবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে, ইনশাআল্লাহ।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম মানবকণ্ঠকে বলেন, ‘সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক, নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার ভেতরে আসা উচিত, এটা সরকারের ও আওয়ামী লীগের দায়বদ্ধতা আছে। দেশের মানুষের প্রতি আমাদের তো কিছু কমিটমেন্ট আছে। সেই জায়গা হল সকলের অংশগ্রহণ করা। অংশগ্রহণের জন্য পরিবেশ তৈরি করা। বিশ্বাসের আস্থার জায়গাটা তৈরি করা। এখানে কোনো নির্ভেজাল নাই। এটা হল আমাদের পরিষ্কার চিন্তা-ভাবনা। এই চিন্তার সাথে দেশবাসীর যে চিন্তা তা এক জায়গা নিয়ে যেতে চাই। এর বাইরে যদি কেউ যায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বলে বিরাজনৈতিকরণ করতে চায়, অপরাজনীতি করতে চায়, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি যারা করে তাদের নির্বাচনের পথে থাকা উচিত, জনগণের আস্থার উপর বিশ্বাস রাখা উচিত। সেই জায়গাটাকে দেশবাসী ও আন্তর্জাতিকভাবে সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তির কাছে পরিষ্কার করা দরকার। এটাই আমাদের পথ।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে বিএনপির নেতৃত্ব কোথায় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘দুজনই (খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান) সাজাপ্রাপ্ত। এদের সঙ্গে ডান, বাম, অতিবাম এসে যুক্ত হয়েছে।’ তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল। আমরা সবসময় ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছি। কখনো পেছনের দরজা দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসেনি। নির্বাচনে প্রহসন ও ভোট কারচুপির কালচার (সংস্কৃতি) শুরু করেছে জিয়াউর রহমান।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকে অতিজ্ঞানী হলেও তারা কম বোঝে, তাকিয়ে থাকে কখন তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে। তারা বসে থাকে, কখন সিগন্যাল আসবে। বিদেশে দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করে, বিদেশ থেকে যেন তাদের ক্ষমতায় বসাবে।’
মানবকণ্ঠ/এআই


