আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি


  • অনলাইন ডেস্ক
  • ০৯ মে ২০২২, ১৭:০৪,  আপডেট: ০৯ মে ২০২২, ১৭:১৯

বাছির জামাল: নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আগামী নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে দীর্ঘদিন ক্ষমতাবলয়ের বাইরে থাকা দল বিএনপি। এ দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলা ও একইসঙ্গে খুব কম সময়ের নোটিশে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতিও রাখছে দলটি। নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে এক দফার আন্দোলনের জন্য নতুন করে একটি নির্বাচনী জোট গঠন কিংবা একই দাবিতে ভিন্ন ভিন্ন প্লাটফর্ম  থেকে সমন্বিত কর্মসূচি দেয়া যায় কি না- তা নিয়ে এরইমধ্যে ক্ষমতাসীনদের বাইরের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছে বিএনপি। নির্বাচনে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এরইমধ্যে ঢাকাসহ তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। রমজানে এলাকার জনগণের জন্য ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছেন তারা, ঈদের পর করছেন ঈদ পুনর্মিলনী। বিএনপির এসব আয়োজনে দেশের অনেক জায়গায় বাধা দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছে। তবে বিএনপি ভোটে যাবে কি না- এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

আগামী নির্বাচন বিএনপির অংশগ্রণ ছাড়া গ্রহণযোগ্য হবে না এবং এজন্য বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন করা হবেÑ গত শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের এমন আলোচনাকে নাকচ করে দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি গতকাল রবিবার রাজধানীর গুলশানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট করেই বলেছেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে- আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তারা নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে এবং সেই নির্বাচন কমিশন যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে, তা দিয়ে একটি জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার ও পার্লামেন্ট গঠিত হবে।’ তিনি বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আগে আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করব। তারপর জাতীয় নির্বাচন। সে জন্য সব প্রস্তুতিও আমাদের আছে। বর্তমান অবৈধ সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না।’

দলের স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত আছে। সে দাবি আদায়ের পরই বিএনপি নির্বাচনে যাবে।’

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের পর আর কোনো নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠা পায়নি বিএনপি। এর মধ্যে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে দলটি। এর আগে ২০১১ সালে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করে দিলে এ ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে দলটি। তবে এ দাবি সত্ত্বেও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় তারা। এজন্য ২০ দলীয় জোটের বাইরে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট নামের অপর একটি জোট করে বিএনপি। এর পরও ওই নির্বাচনে বিজয় লাভ করতে পারেনি তারা। তবে দ্বাদশ নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসার প্রাক্কালে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে এক দফার আন্দোলন এগিয়ে নিতে একটি ঐক্যমঞ্চ গঠনের জন্য  ক্ষমতাসীনদের বাইরের দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে বিএনপি।

এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। যেসব দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে সেসব দলের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, নতুন করে জোট গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। তবে তারা ভিন্ন ভিন্ন প্লাটফর্মে থেকে সমন্বিত কর্মসূচির প্রস্তাব রেখেছেন। এতেও বিএনপির সম্মতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। তবে বেশ কয়েকটি দল যেমন, জেএসডি সভাপতি আ স ম রব, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ আরো অনেকেই দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে জাতীয় সরকার গঠনের পক্ষে। এ মতের বিপক্ষে নয় বিএনপিও। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় সরকারের ব্যাপারে বলেছেন, নির্বাচন হবে নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে। নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। যেসব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তারাই ওই জাতীয় সরকারে থাকবে।

এর পাশাপাশি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়ারও সম্ভাব্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। এরকম একটি নির্দেশনার প্রেক্ষিতে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ঈদকে উপলক্ষ করে নিজ নিজ এলাকায় চষে বেড়িয়েছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা নির্বাচনী এলাকায় ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ও উপহার সামগ্রী বিতরণসহ নানাভাবে যোগাযোগ রাখছেন। তারা লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঈদ শুভেচ্ছা পৌঁছে দিয়েছেন। ঈদের শুভেচ্ছা সংবলিত পোস্টারেও ছেয়ে গেছে প্রতিটি এলাকা। জানা যায়, রমজান মাসে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, বগুড়া, রংপুর, সিলেট, জামালপুর, জয়পুরহাটসহ অন্তত ৪০টি সাংগঠনিক জেলার ইফতার মাহফিলে ভার্চুয়ালি অংশ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এক দিনে একাধিক ইফতারে অংশ নেন তিনি। সব ইফতার মাহফিলেই দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন।

মানবকণ্ঠ/এআই


poisha bazar