ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারীদের কাটছাঁট

পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হচেছ আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতাদের


  • সাইফুল ইসলাম
  • ১২ মার্চ ২০২২, ১৬:৪৮,  আপডেট: ১২ মার্চ ২০২২, ১৬:৫৫

আধিপত্য বিস্তার, অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টিসহ বিভিন্ন সময়ে যারা দলকে বিতর্কিত করেছেন তাদের কাটছাঁট করার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। জেলা-উপজেলা কিংবা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। কাউকে পদ থেকে সরিয়ে শুধু সদস্য করা হচ্ছে। তবে সেটিও হচ্ছে বেশ কৌশলে।

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কৌশলী হতে হচ্ছে হাইকমান্ডকে। ফলে বিতর্ক সৃষ্টিকারী ওইসব নেতাকে দল থেকে একেবারে অব্যাহতি না দিলেও ভর্ৎসনা, অসন্তোষ প্রকাশ আর উপদেশ দেয়ার মাধ্যমে আপস-মীমাংসায় জোর দিয়েছে দলটি।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম মানবকণ্ঠকে বলেন, ‘যারা দলের ভাবমূর্তি ক্ষণœ করবে; অথবা দলের মর্যাদা, সম্মান, জনপ্রিয়তা ক্ষুণœকারী যেই হোক তার ব্যাপারে দলে, বিশেষ করে নেত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া গেলে দলীয় ব্যবস্থাও নেয়া হবে। কারণ আওয়ামী লীগ করার নামে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করবে, বঙ্গবন্ধুর সম্মান নষ্ট করবে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী এত কষ্ট, ত্যাগ, শ্রম দিয়ে দলটিকে মানুষের আস্থার জায়গায় নিয়েছেন, সেই আস্থার জায়গায় কোনো ব্যক্তির অপকর্ম আওয়ামী লীগ গ্রহণ করবে না।’

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সূত্র বলছে, আগামী বছর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় ভালো-খারাপÑ সবাইকেই দরকার। সবাইকে নিয়েই সমঝোতার মাধ্যমে চলার কৌশল নিয়েছে দলটি। গত মাস থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা সারা দেশ সফর শুরু করেছেন। সম্মেলন আর বর্ধিত সভার মধ্য দিয়ে তারা খুঁটিনাটি সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন। আর যারা দলের ভেতরে কোন্দল সৃষ্টি করেছেন, তাদের ব্যাপারে হাইকমান্ডের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে কাউকে কাউকে বাদ দেয়াও হচ্ছে। সমঝোতার মাধ্যমে কোন্দল মেটানো এসব সফরের অন্যতম লক্ষ্য।

দলীয় সূত্রমতে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে গণভবনে অনুষ্ঠিত হয় দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক। সৈই বৈঠকে রাজশাহী বিভাগের রিপোর্ট উপস্থাপনকালে সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সমস্যা তুলে ধরেন। নাটোর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল কুদ্দুস ও সাধারণ সম্পাদক নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গ উঠে আসে। এ সময় এ দুই নেতার ভূমিকা ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুততম সময়ে সম্মেলন করার নির্দেশনা দেন। প্রয়োজনে নাটোরে বিকল্প নেতৃত্ব খোঁজার কথাও বলেন তিনি। তারপর চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হয়। সেই সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি হিসেবে আবারো সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে সরিয়ে দেয়া হয় নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম শিমুলকে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন মানবকণ্ঠকে বলেন, ‘যাদের কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে, যার প্রতি নেতাকর্মীদের আস্থা থাকবে না তারা দলের কোনো দায়িত্ব পাবেন না। যারা দলের সিদ্ধান্ত মানে না, দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করে, দলকে বিতর্কিত করে, আমাদের প্রিয় নেত্রীর উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করেÑ সে ধরনের লোক দলের কোনো দায়িত্বে আসবে না।’

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আব্দুল কাদের মির্জার সঙ্গে দ্বন্দ্ব নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ হারান সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনাম সেলিমকে আহ্বায়ক করে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের ৮৭ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেই কমিটিতে একরামুল করিম চৌধুরীকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়। যা দলকে বিতর্কিত করার ফল হিসেবে দেখছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও গাজীপুর নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে গোপনে ধারণ করা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জেলার কয়েক গুরুত্বপূর্ণ নেতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন। এর জেরে জাহাঙ্গীর আলম দল থেকে বহিষ্কার হন।

গত সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে চাঁদপুর জেলার নেতাদের বৈঠক হয়। সভায় চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনার জেরে কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে তিরষ্কার করেন। বৈঠকে অবৈধ পন্থায় পদ্মা-মেঘনায় বালু উত্তোলনের বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের নাম ভাঙিয়ে কীভাবে ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন চেয়ারম্যানে জাতীয় পর্যায়ের আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে যানÑ এ বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন একাধিক নেতা ও এমপি। তাদের ভাষ্যÑ নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সেখানে নদী ভাঙন রোধে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। সেখানে কার প্রশ্রয়ে একজন চেয়ারম্যান দিনের পর দিন এ ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখছেন। এটি জানা জরুরি। অবৈধ পন্থায় বালু উত্তোলনের বিষয় তদন্তে জন্য উচ্চপর্যায়ের কমিটিও হয়েছে। সেলিম খানের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযোগে বিব্রত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, দলের পদ ব্যবহার করে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে দেয়া হবে না। আগামীতে সম্মেলনের মাধ্যমে দলীয় পদ থেকে বাদ পড়তে পারেন সেলিম খান। রাজনৈতিকভাবেও তার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। সেলিম খানের বিরুদ্ধে হাইকমান্ডের কাছে বেশ কয়েকটি চিঠিও দেয়া হয়েছে। এখন শুধু সম্মেলন পর্যন্ত অপেক্ষা।  


poisha bazar