

বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ১২ দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে অক্টোবরের মধ্যেই সরকারবিরোধী বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় দলটি। এজন্য দলের পক্ষ থেকে একের পর এক কর্মসূচি হাতে নেয়া হচ্ছে। তবে সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির এসব কর্মসূচি ভালোভাবে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির নামে দেশের অভ্যন্তরে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা হচ্ছে কিনা- সে বিষয়ে সজাগ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন মানবকণ্ঠকে বলেন, বিএনপির এসব কর্মসূচি নতুন কিছু নয়। ১০ ডিসেম্বর থেকে সরকার থাকবে না, সরকার ও আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না- এমন অনেক কথাই বিএনপির নেতারা বলছে। এখন আবার বলছে অক্টোবরের ভেতরে সরকার থাকবে না। তাদের কথায় মনে হচ্ছে বিদেশিরা বিএনপিকে সরকারে বসিয়ে দেবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে জনগণই এদেশের মালিক। জনগণ আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং সেই নির্বাচনে তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। কেউ যদি আন্দোলনের নামে জনগণের সেই পথে বাধা সৃষ্টি করে- তাদের জনগণই প্রতিহত করবে। তাই বিএনপি কি কর্মসূচি দিল আর কি দিল না, এই নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন আরও বলেন, বিএনপি কর্মসূচির নামে কি করতে চায়? তারা কি আগুন-সন্ত্রাস করতে চায়? দেশের অভ্যন্তরে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়? রাজপথ দখল করতে চায়? তা আওয়ামী লীগ পর্যবেক্ষণ করবে। তারা যদি কর্মসূচির নামে নৈরাজ্য করে দেশের জনগণই প্রতিহত করবে বলে দাবি করেন তিনি।
আগামী বছরের শুরুতে দেশে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে দেশের সব রাজনৈতিক দল। এ নির্বাচনে দৃষ্টি রাখবে বিদেশি বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো। নির্বাচনের পরিবেশ পর্যাবেক্ষণ করছে তারা। সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তিসহ বেশকিছু দাবি নিয়ে সরকারবিরোধী একদফা আন্দোলনে বিএনপি। দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলনে সরব তারা। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফের ১২ দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। মূলত এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে নির্বাচনের আগে সরকার ও আওয়ামী লীগের ওপর বড় ধরনের রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে চায় তারা। তবে বিএনপির এসব কর্মসূচি সরকার ও আওয়ামী লীগের ওপর কোনো ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে পারবে না বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
যদিও বিএনপির এসব কর্মসূচি হালকাভাবেও নেয়া হচ্ছে না। তাদের ভাষ্যমতে, বিএনপি বিদেশি প্রভুদের ওপর নির্ভরশীল। বিদেশিদের ইশারায় আন্দোলনে ব্যস্ত তারা। নির্বাচনের আগে দলের কর্মী ও সমর্থকদের চাঙ্গা করতে নিত্যনতুন রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হচ্ছে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। নির্বাচনের অংশগ্রহণ বিএনপির প্রধান লক্ষ্য নয়, তারা মনোনয়ন বাণিজ্য করতেই নির্বাচনে আসবে মনে করেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা।
প্রভুদের ইশারায় বিএনপির নির্বাচনের অংশগ্রহণ নির্ভর করছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন মানবকণ্ঠকে বলেন, বিএনপির কত আন্দোলন দেখলাম, কত কর্মসূচি দেখলাম, এসব কর্মসূচি নতুন কিছু নয়। তারা এসব কর্মসূচির মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের প্রভুরা ইশারা দিলেই তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। ফলে এসব কর্মসূচি নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে তাদের কর্মসূচি নিয়ে আমরাও সতর্ক আছি বলে জানান তিনি।
বিএনপি যেন আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা পরিবেশ করতে না পারে- সেজন্যই শান্তি সমাবেশ নিয়ে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও রাজধানী ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিট ও থানায় সতর্ক অবস্থানে থাকবে দলটি। এছাড়াও ঢাকাসহ সারাদেশে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। মূলত এই সকল কর্মসূচির মধ্যদিয়ে সরকারের উন্নয়ন সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা হবে। আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
মানবকণ্ঠ/এআই